বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। রাতে আবদুল কুদ্দুসসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ভারতীয় এলাকায়। এপারে বাংলাদেশের কসবা থানার লাতুমুড়া। মুক্তিযোদ্ধাদের মূল লক্ষ্য অবশ্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কসবার পুরোনো বাজার ঘাঁটি, সেটি দখল করা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত কসবা।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা লাতুমুড়ায় সমবেত হয়েছেন বিশেষ কারণে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মনোযোগ আকর্ষণ ও তাদের ধোঁকা দেওয়া। প্রায় এক ব্যাটালিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হন লাতুমুড়ার সামনে।

মুক্তিযোদ্ধারা লাতুমুড়ার সামনে গোলাগুলি ও ছোটখাটো যুদ্ধের মহড়া প্রদর্শন করেন। এর মাধ্যমে সফলতার সঙ্গেই তাঁরা পাকিস্তানিদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হন। কসবার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কেন্দ্রীভূত হয়ে লাতুমুড়ার সামনে সমবেত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নেয়। এ ঘটনা চলাকালে আবদুল কুদ্দুসসহ মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ অন্ধকারে স্থান পরিবর্তন করেন।

২২ অক্টোবর ভোরে একদল মুক্তিযোদ্ধা লাতুমুড়ার সামনে থেকে প্রথম আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণ প্রতিরোধ শুরু করে। তখন আবদুল কুদ্দুসরা পেছন দিক থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। বিস্মিত পাকিস্তানিরা এমন আক্রমণ আশা করেনি। আক্রমণ প্রতিরোধে তারা ব্যর্থ হয় এবং পশ্চাদপসরণ করে।

তবে পাকিস্তানিরা কিছুক্ষণের মধ্যেই পুনরায় সংগঠিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুখোমুখি যুদ্ধ চলতে থাকে। আবদুল কুদ্দুস ও তাঁর সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন। তাঁদের সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা হতোদ্যম হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা পিছু হটতে শুরু করে।

এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের ওপর আরও চড়াও হন। দুই পক্ষে প্রায় হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যুদ্ধের একপর্যায়ে একটি শেল বিস্ফোরিত হয় আবদুল কুদ্দুসের পাশে। স্প্লিন্টার তাঁর বুকে লাগে। আহত হয়েও তিনি দমে যাননি। যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে ফিল্ড চিকিত্সাকেন্দ্রে পাঠান।

সেদিন প্রায় তিন ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানিরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ২৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ১৮ জন আহত হয়। এলএমজি, পিস্তল ও গ্রেনেডসহ নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।

আবদুল কুদ্দুস ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধরত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। পরে ওই রেজিমেন্টের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর নবগঠিত নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২ নম্বর সেক্টরে তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান