এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে আপনি আমাদের গোপনীয়তা নীতি তে সম্মতি দিয়েছেন
বিজ্ঞাপন
default-image

মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাওয়ালপিন্ডিতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টারে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবর শুনে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

২১ জুলাই তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করার পর আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে।

মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীনের প্রথম কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের, বিশেষ করে প্লাটুন ও সেকশন কমান্ডারদের মনোবল, সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। তাঁদের মনোবল ও সাহস ফিরিয়ে আনতে তিনি নতুন কৌশল প্রয়োগ করেন। শুধু প্লাটুন ও সেকশন কমান্ডারদের সমন্বয়ে ক্ষুদ্র দল করে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে কামালপুরেই হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে বেশ কটি অপারেশন চালান। সব অপারেশনেই তিনি তাঁদের সঙ্গে থাকেন এবং নেতৃত্ব দেন। বেশির ভাগ অপারেশনই সফল এবং এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কিছু ক্ষয়ক্ষতিও হয়। পরবর্তী সময়ে এসব যোদ্ধাই তাঁর নেতৃত্বে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে ধলই বিওপি, কানাইঘাট ও এমসি কলেজের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।

যে কটি যুদ্ধ বাংলাদেশের দ্রুত বিজয়ের পটভূমি তৈরি করে, তার মধ্যে ধলই ও কানাইঘাটের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ২৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ধলইয়ে আক্রমণ করে। পাঁচ দিনের টানা যুদ্ধে ধলই মুক্ত হয়। এর পর আটগ্রাম-চারগ্রাম ও কানাইঘাটে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি হন। কানাইঘাটের গৌরীপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। ২৬ নভেম্বর ভোরে তাঁর বাহিনীর একাংশের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে। এতে মুক্তিবাহিনীর একটি কোম্পানি নাজুক অবস্থায় পড়ে। কোম্পানির কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহবুব শহীদ হন।

কানাইঘাট যুদ্ধে বিজয় মুক্তিবাহিনীর সিলেট বিজয় ত্বরান্বিত করে। এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পিছিয়ে দরবস্ত ও খাদিমনগরে অবস্থান নেয়। মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি অবস্থানের মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে অনুপ্রবেশ করে সিলেট শহরের উপকণ্ঠে যাবেন। কাঁচা রাস্তা, খাল-বিল-হাওরের মধ্য দিয়ে দুর্গম পথ পেরিয়ে প্রায় এক হাজার ১০০ মুক্তিযোদ্ধা তাঁর নেতৃত্বে ১৩ ডিসেম্বর সিলেট এমসি কলেজে পৌঁছান। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, পথে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে শক্তি ক্ষয় না করে সিলেট শহরের কাছাকাছি পৌঁছে তাদের চমকে দেওয়া। তাঁর এ পরিকল্পনা বেশ কাজ করে। তাঁদের দেখে পাকিস্তানি সেনারা একেবারে হতভম্ব হয়ে পড়ে। এমসি কলেজের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান