বিজ্ঞাপন
default-image

আমানউল্লাহ কবির রেলওয়েতে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসের মাঝামাঝি ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন।

জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ধানুয়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম কামালপুর। এ গ্রামের মাঝামাঝি সীমান্ত ফাঁড়ি। সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। ১৯৭১ সালে কামালপুরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি। এখানে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল তাদের ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের একটি দল এবং বিপুলসংখ্যক রেঞ্জার্স, ইপিসিএএফ ও রাজাকার।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এখানে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে মুক্তিবাহিনী বিচ্ছিন্ন আক্রমণ ও গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে তাদের নাজেহাল ও হয়রানি করতে থাকে। ৩১ জুলাইয়ের যুদ্ধের পর থেকে প্রায় দিনই মুক্তিবাহিনীর দল কামালপুর এবং এর পার্শ্ববর্তী ধানুয়া, উঠানিপাড়া, ঘাসিরগাঁও, পালবাড়ী, বক্সপাড়া, মাঝির চর প্রভৃতি জায়গায় আকস্মিক আক্রমণ চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর সুবেদার মনসুরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ১৩৫ জনের একটি দল আকস্মিকভাবে কামালপুরে আক্রমণ করে। তাঁরা বেশির ভাগই ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গণযোদ্ধা। আমানউল্লাহ কবিরও স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করা মাত্র তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। গোলাগুলির শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঘাঁটির একদম কাছাকাছি গিয়ে অবস্থান নেন।

৩১ জুলাইয়ের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের ঘাঁটিতে অত্যাধুনিক অস্ত্রের মজুদ আরও বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে ছিল কয়েকটি ৮১ এমএম মর্টার ও দূরপাল্লার স্বয়ংক্রিয় ভারী মেশিনগান। পাশে বকশীগঞ্জে ছিল তাদের ৮৩ ইনডিপেনডেন্ট মর্টার ব্যাটারি। সেগুলো দিয়ে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র বলতে কেবল এলএমজি, স্টেনগান ও রাইফেল। হালকা অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই আমানউল্লাহ কবিরসহ মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণ মোকাবিলা করেই একটু একটু করে তাঁরা এগিয়ে যান। পাকিস্তানি সেনারা মাঝেমধ্যে আলো জ্বালিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিল যুদ্ধস্থল। এই আলোর সাহায্যে তারা অনেক মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান চিহ্নিত করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তারা মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ অবস্থায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা পিছু হটতে বাধ্য হন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের তীব্র আক্রমণ উপেক্ষা করে আমানউল্লাহ কবিরসহ কয়েকজন বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আমানউল্লাহ কবির। এ যুদ্ধে আরও সাত-আটজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্টের।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান