একদা অনেক বছর আগে যার চেহারা, চলা, বলা
মুখস্থ ছিল আমার, যার সঙ্গে প্রায়
প্রতিদিন হতো দেখা সাক্ষাত্, তাকে
আজ এমনি ধূসর মনে হয়, এমনই আবছা, তখন
বড়ই অস্বস্তি বোধ করি যে ইচ্ছে হয় নিজের চুল ছিঁড়ি,
তক্ষুনি টেলিফোন করি কোনও বন্ধুকে সেই নামের সন্ধানে।
মনে পড়ে, আমার সেই সঙ্গী সেকালে একজন
কবি হিশেবে প্রচুর সুনাম
অর্জন করেছিলেন। কোনও কোনও তরুণ তার কবিতার
পঙিক্ত ব্যবহার করতো প্রেমিকার কাছে লেখা চিঠিতে।
তার কবিতা তুমুল আলোচিত হতো
বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়ের ক্যান্টিনে। হায়, যার
নাম গুঞ্জরিত হতো বিভিন্ন পত্রিকার অফিসে,
আজ সে বিস্মৃতির বালিতে সমাহিত।
তার কি কোনও কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিলো? যদ্দুর
মনে পড়ে, তার বই প্রকাশের কিছু গুঞ্জন শুনেছিলাম,
কিন্তু সম্ভাব্য সেই কাব্যগন্থ্থ তিমিরেই
নিমজ্জিত হয়েছে। অথচ তার পদাবলী
কতই না জ্বলজ্বলে মনে হয়েছিলো সেকালে। আজ
তার নাম কিছুতে
মনে করতে পারছি না। এই লজ্জা আমি কোথায় লুকাই?
একদা তার কবিতা শোনার জন্যে কত না
খোশামোদ করেছি, অবশ্য সে আমাকে
নিরাশ করেনি; স্মৃতি থেকে কী চমত্কার আবৃত্তি ক’রে
শুনিয়েছে নিজের সাধের পঙিক্তমালা।
অথচ আজ তার নাম মুছে গেছে আমার
স্মৃতির তরঙ্গমালা থেকে। নিজেকে ধিক্কার দিই,
তাকিয়ে থাকি দূর দিগন্তের দিকে অসহায়, পরিত্যক্ত
পথিকের মতো। এই মুহূর্তে সেই বিস্মৃত
আবছা, ধোঁয়াটে কবিকে উচ্চস্বরে নাম ধ’রে ডাকতে ইচ্ছে করছে,
অথচ করুণ গোঙানি ছাড়া অন্য কোনও অর্থবহ ডাক
নিঃসৃত হচ্ছে না কণ্ঠ থেকে। আমাকে
নিষ্ঠুর অন্ধকার গ্রাস ক’রে নিয়ে চলেছে জন্মান্ধ গুহায়!
১৮.৩.২০০৩
সূত্র: ২৬ মার্চ ২০০৩ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত