বিজ্ঞাপন
নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ চলছে
নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ চলছেছবি: আনন্দবাজার পত্রিকার (ভারত) সৌজন্যে

কলকাতায় বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাসায় আমার মন্তব্যের সরাসরি জবাব তাজউদ্দীন আহমদ না দিয়ে জানতে চেয়েছিলেন সার্বিকভাবে বিরাজমান অবস্থার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।

আমি তাঁকে বলি, আমরা যাঁরা ঢাকায় ছিলাম তাঁরা গ্রামাঞ্চলে কী ঘটছে, তা কমই জানতাম। প্রথম রাতের বর্বরতার মাত্রায় নগরবাসী ছিল সম্পূর্ণভাবে আতঙ্কগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দূরবর্তীভাবেও যাঁরা সম্পর্কযুক্ত, এমন লোকজনও প্রথমবার কারফিউ ওঠা মাত্রই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছিলেন। সেই মুহূর্তে কী করা উচিত, সে বিষয়ে সাধারণ জনগণের কাছে কোনো রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা পৌঁছানো হয়নি।

এদিকে কারফিউর সময় কমিয়ে এনে পাকিস্তানের সেনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষজনকে বলা হয়েছিল, তাদের নিজ নিজ কাজে যোগ দিতে। লোকজন কদাচিৎ নিজেদের মধ্যে কথা বলত। না জানি আবার তাদের কথা অনাকাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ফটাফট গ্রেপ্তার, সঙ্গে সঙ্গে প্রাণদণ্ড অথবা গুম হয়ে যাওয়ার সার্বক্ষণিক ভয় লোকজনকে করে তুলেছিল মারাত্মকভাবে ভীত।

ক্র্যাকডাউনের পর থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের কী করণীয়, সে বিষয়ে একটি কথাও শোনেনি। এ সময় সেনাবাহিনীর একজন অপরিচিত বাঙালি মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা সম্পর্কিত এক চমক সৃষ্টিকারী ঘোষণা দেন ক্র্যাকডাউনের পরপরই। তবে তার প্রভাব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তা ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করতেন না।

প্রথম আশার ঝলকানি

default-image

সেই সর্বব্যাপী তমসায়, প্রথম আশার ঝলকানি ছিল তাঁর (তাজউদ্দীন আহমদ) ১০ এপ্রিলের বেতার ভাষণ। স্বাধীনতার ডাক ও মুক্তিসংগ্রাম চালিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির এই ভাষণ বেশিমাত্রায় প্রভাব তৈরি করে। কারণ, এই ভাষণে নির্দিষ্ট রণক্ষেত্রের দায়িত্বসহ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ইবিআর) বিদ্রোহী কমান্ডারদের নাম ঘোষণা করা হয়। জনগণ তাঁদের সত্যিকারের যোদ্ধা হিসেবে চিনতে পারে। কেননা, তাঁরা পাকিস্তানি আক্রমণের পরপরই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। যত দিন সম্ভব হয়েছিল তাঁরা যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন।

সর্বব্যাপী নৈরাশ্যের মধ্যে তাঁর (তাজউদ্দীন আহমদ) বেতার ভাষণটি একটি আলোর দিশারি হিসেবে কাজ করে। দ্রুতই তা সবার মনোবল চাঙা করে। কিন্তু এর প্রভাব আবার দ্রুতই ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। যেহেতু বিভিন্ন স্থান থেকে একের পর এক প্রতিরোধযোদ্ধাদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার খবর আসতে থাকে, তবে সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করেছিল যে সন্ত্রাসের কাছে বশ্যতা স্বীকার করা সত্ত্বেও মানুষ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সহজাত ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে। সম্ভবত ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে থাকবে এই শর্তে, এই সংগ্রাম নিরবচ্ছিন্নভাবে জারি থাকবে।

আমরা ঠিক সেটাই করতে চেষ্টা করছি, আমাকে আশ্বস্ত করে তাজউদ্দীন বললেন।

আমি বললাম, তাহলে প্রতিরোধযুদ্ধের মাত্রা কেন এখন পর্যন্ত গতি সঞ্চারের কোনো লক্ষণ দেখাতে পারছে না? আপনার বেতার ভাষণ ও সেক্টর কমান্ডারদের নাম ঘোষণার প্রায় এক মাস পরেও। এটা কি আশ্রয়দাতা সরকারের তার দেশের মাটি থেকে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে আরোপিত বিধিনিষেধের জন্যই?

আমি জানতে চেষ্টা করেছিলাম ভারতের আশ্রয়দানের শর্ত সম্পর্কে। যেহেতু ঢাকায় এটা একটা বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে আমার কানে এসেছিল।

সামরিক আক্রমণ পরিচালনায় কিছু সমস্যা

ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে বিদ্রোহীদের সামরিক আক্রমণ পরিচালনা বিষয়ে কিছু সমস্যার কথা তাজউদ্দীন স্বীকার করেন। যেগুলোর অধিকাংশই ছিল এমন এক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত এবং কোনো পক্ষেরই সে সম্পর্কে পূর্ব ধারণা ছিল না। কিন্তু সেই সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে মিটিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তখন পর্যন্ত তাজউদ্দীন পরিকল্পনা বিষয় উল্লেখ করার ক্ষেত্রে বাক্‌সংযমী ছিলেন। কিন্তু যেহেতু আমি অধিকৃত অঞ্চলে মানুষের মনোবল বৃদ্ধির রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তার পক্ষে যুক্তি প্রদান করি, সে জন৵ তিনি বললেন, দেশের অভ্যন্তরে খুব শিগগিরই গেরিলা আক্রমণ শুরু করা হবে। পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হবে, সে সম্পর্কে তিনি আমার মতামতও জানতে চাইলেন।

তাজউদ্দীনের এই প্রশ্ন আমাকে বলার সুযোগ করে দিল গেরিলা অভিযান শুরুর আগে দুটি নাজুক ব্যাপার, যা জরুরি ভিত্তিতে সামাল দেওয়া প্রয়োজন। বিষয় দুটির একটি ছিল রাজনৈতিক, আরেকটি ছিল বৃহত্তর রণনৈতিক।

আমি বললাম, সর্বপ্রথম কাজ হলো নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের (এমপিএ) মধ্যে কতসংখ্যক প্রবাসী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছেন, তার একটা সঠিক হিসাব নেওয়া। কারণ, ঢাকায় এটা বলাবলি হচ্ছে, পাকিস্তানের সামরিক জান্তা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি) কন্যা আখতার সোলায়মানকে করাচি থেকে ঢাকায় পাঠিয়েছে। তিনি দেশের অভ্যন্তরে থাকা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস৵দের সংগঠিত করার চেষ্টা করে চলেছেন।

মাথা গুনে যদি দেখা যায় তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাহলে তাঁদের বলা হবে এমন একটা যুক্ত বিবৃতি দিতে যে জানুয়ারির শুরুতে তাঁরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে শপথ নিয়েছিলেন পাকিস্তানের সংবিধানে ছয় দফা অন্তর্ভুক্তির জন্য মিলিতভাবে চাপ দিতে। যেহেতু তাঁদের নেতা তাঁদের কখনোই ভারতে যেতে বলেননি, তাই তাঁরা কলকাতায় যাননি, প্রকারান্তরে ভারতের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যকে সাহায৵ করতে। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। (৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সমর্থক সংবাদ বুলেটিন দ্য পিপল–এ প্রথম এ–জাতীয় একটি হিসাব বের হয়। তাতে দেখা যায়, ওই তারিখ পর্যন্ত ১১০ জন এমএনএ এবং ২০০ জন এমপিএ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন করেছিলেন। আর পশ্চিম জার্মানির সাপ্তাহিক পত্রিকা ডের স্পিগেল–এর ৩০ আগস্ট তারিখে প্রদত্ত হিসাব অনুসারে সংখ্যাগুলো ছিল: ৭৯ জন এমএনএ এবং ১৯৪ জন এমপিএ। বাংলাদেশ ডকুমেন্টস, খণ্ড দুই, পৃ: ৩৫)।

সীমান্তে পাকিস্তানি আক্রমণের আশঙ্কা

দ্বিতীয় আরেকটি সংকটাপন্ন বিষয়ের প্রতি আমি তাজউদ্দীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। সেটা ছিল ঢাকা ছাড়ার প্রাক্কালে আমি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের কর্মকর্তা জাফর নকভির কাছ থেকে যা শুনেছিলাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি বিদ্রোহী বাঙালি সেনাদের ঘাঁটিগুলোতে ঝটিকা আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে। বিষয়টি সবিস্তার তাঁর কাছে বর্ণনা করি।

তাজউদ্দীনকে আমি বলি, নকভি পাকিস্তানি হলেও একজন সৎ ও নির্ভরযোগ্য মানুষ হিসেবে আমার প্রায় এক দশকের পরিচিত। তাঁর তরুণ বয়স থেকেই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগে যখন তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখন থেকেই বামপন্থী চিন্তাভাবাপন্ন। পরবর্তী সময়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় লাহোর থেকে প্রকাশিত পাকিস্তান টাইমস পত্রিকায় রাজনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে।

পেট্রোলিয়াম পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ তদারকির এমন একটি দায়িত্বের দরুন তাঁকে সপ্তাহে কয়েকবার গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করতে হয়। আমার প্রতি তাঁর অকৃত্রিম বন্ধুসুলভ মনোভাব থাকায় আমার সম্ভাব্য বিপদ আশঙ্কায় তিনি আমাকে শহরাঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বলেন।

তাজউদ্দীনকে আরও জানাই, অন্য একটি ওয়াকিবহাল সূত্রেও এ ধরনের আশঙ্কার কথা আমি শুনেছি। বস্তুত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হওয়ার সময় থেকেই আমরা এই আশঙ্কার কথা শুনে আসছিলাম। তখন থেকেই ঢাকায় সরকারি মহলে এমন জল্পনা–কল্পনা চলছিল যে ভারত–সমর্থিত বিদ্রোহীদের তৎপরতা বিপজ্জনক সীমায় পৌঁছার আগেই পাকিস্তানের উচিত হবে ঝটিকা সামরিক আক্রমণ চালিয়ে সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ইবিআর এবং ইপিআর ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করে দেওয়া। এটা করার জন্য পাকিস্তানের উচিত হবে চীনকে রাজি করানো, যাতে ভারতের মনোযোগ বিভ্রান্ত করার জন্য চীন কৌশলগত হামলা চালায় ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে। সেই সুযোগে পাকিস্তান নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু বরাবর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাতে পারে।

আমি তাজউদ্দীনকে জিজ্ঞাসা করি, পাকিস্তান-চীনের সম্মিলিত যৌথ সামরিক তৎপরতার বিরুদ্ধে ভারতের কোনো সামরিক মিত্র বা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেই। তাই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সাহায্য করতে গিয়ে ভারত তার নিজের নিরাপত্তার জন্য এত বড় ঝুঁকি নিতে সাহসী হবে কি না। এর বিকল্প হিসেবে আমি যুক্তি দিতে থাকি, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই নিরাপত্তাহীনতা ঢাকতে ভারতকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য চাইতে রাজি করানো যাবে কি না। যাদের বিশাল সেনাবাহিনী দুই বছর আগে উসুরি নদীর তীরে একটা চীনা ব্রিগেডকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয় এবং এখন পর্যন্ত চীনের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত বরাবর বিশাল বাহিনী মোতায়েন রেখেছে।

তাজউদ্দীন এই বিষয়ে কতিপয় প্রশ্ন তোলেন এবং পরিশেষে বলেন যে আপনার উচিত হবে দিল্লি গিয়ে সেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সচিব পি এন হাকসারের সঙ্গে কথা বলা। তিনি ভারতের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতি সমন্বয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত আছেন।

আপনি নিজে কেন তা করবেন না। যেহেতু আমি তাঁদের চিনি না এবং তাঁদের নীতি সম্পর্কে খুবই কম জানি? আমি তাঁর কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম।

উত্তরে তাজউদ্দীন বললেন, না, আমি তা করতে পারছি না। মাত্র দুই দিন আগে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তা ছাড়া আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে মন্ত্রিসভাকে এত সব কথা আমাকে জানাতে হবে যে সেটা করাটা এই পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নয়।

এরপর পরবর্তী তিন দিন ধরে আমাদের দুজনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। আমি প্রাসঙ্গিক সব তথ্য-উপাত্ত সাজাতে থাকি। এর মধ৵ দিয়ে আমি দুই সরকারের মধ্যে সম্পর্কের ধরনটি বুঝতে শুরু করি।

সম্ভাব্য পাকিস্তান-চীনের আঁতাত মোকাবিলা

তখন পর্যন্ত বিষয়টি আমার কাছে পরীক্ষামূলক বলে মনে হয়েছিল এবং সেটা কোনো রকম দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা ভারতের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তসংক্রান্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ও বৈদেশিক নীতি গভীরভাবে জানতে পারছি, ততক্ষণ সম্ভাব্য পাকিস্তান-চীনের আঁতাত মোকাবিলায় জোটনিরপেক্ষ ভারতকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে রাজি করানো খুবই কষ্টসাধ্য হবে।

আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে আমাদের প্রস্তাব চূড়ান্ত করার আগে আরও তথ্য-উপাত্ত দরকার। তাই আমাদের উচিত হবে অতিসত্বর দিল্লি গিয়ে সেসব খুঁজে বের করা।

কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমার পক্ষে দিল্লি যাওয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকা থেকে অধ্যাপক ড্যানিয়েল থর্নারের কলকাতায় আগমনের জন্য আমাকে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়। থর্নার ছিলেন ঢাকায় আধা সরকারি পাকিস্তান উন্নয়ন অর্থনীতি অধ্যয়ন ইনস্টিটিউটের (পিআইডিই) ফোর্ড ফাউন্ডেশন মনোনীত পরামর্শক। নির্যাতিত বাঙালিদের প্রতি সহানুভূতিশীল থর্নার এপ্রিলের শুরু থেকেই গোপনে আমাদের দলটিকে নানাভাবে সহায়তা করে এসেছেন। আমার ঢাকা ছাড়ার আগে তিনি রাজি হয়েছিলেন আমি ঠিক কোন পথে ফিরতে পারব, সে বিষয়ে আমাদের দলের পরামশ৴ নিয়ে কলকাতা আসবেন। তখন তিনি আমাকে কলকাতার তিনটি ঠিকানা দিয়ে বলেছিলেন, ২০ মে নাগাদ ওই সব ঠিকানায় তাঁর খোঁজ করার জন্য। আমি সেখানে খোঁজ করি এবং তাঁর সঙ্গে দেখা হয়।

ড্যানিয়েল থর্নার পাকিস্তানিদের নজরদারি এড়িয়ে আমার সঙ্গে কলকাতায় দেখা করার জন৵ তাঁর গন্তব্যস্থল প্যারিসে পৌঁছাতে একটি দীর্ঘ কৌশলী যাত্রাপথের আশ্রয় নেন। ঢাকা থেকে করাচি-ব্যাংকক-কলকাতা-দিল্লি হয়ে তারপর প্যারিস।

কলকাতায় থর্নারের সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমাকে বলেন, আমার ঢাকা ফিরে যাওয়ার সময় আগের পথই ব্যবহার করা উচিত এবং সীমান্তে আমার জন্য সেই একই দল অপেক্ষা করবে।

আমি থর্নারকে বলি, বাস্তব পরিস্থিতি আমার ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনাকে পিছিয়ে দিয়েছে। দিন দুয়েকের মধ্যে আমার দিল্লি যাওয়া প্রয়োজন হতে পারে। সেখান থেকে কলকাতায় ফিরে আসার পর তবেই ঢাকা যাওয়ার পরিকল্পনা পুনরায় ঠিক করা হবে। থর্নার বলেন, প্যারিসে পৌঁছে তিনি খবরটা পাঠিয়ে দিতে পারবেন।

২২ মে সকালে থর্নার ও আমি পাশাপাশি আসনে বসে একই উড়োজাহাজে করে দিল্লি যাই। ভারতের রাজধানীতে আমার মিশন সম্পর্কে তিনি কোনো কিছু জানতে চাননি। তিনি নিজে থেকেই ভারত সরকারের কয়েকজন উচ্চপদস্থ সচিবের নাম উল্লেখ করে আমাকে বলেন, তাঁদের সঙ্গে আমার দেখা করাটা লাভজনক হবে। (চলবে)