বিজ্ঞাপন
default-image

অনেক গুণের অধিকারী ছিলেন চিকিৎসক হুমায়ূন কবীর। গান করতেন। ভালো গিটার ও তবলা বাজাতে পারতেন। ক্রিকেট খেলতেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র এক মাস আগে এই তরুণ চিকিৎসককে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল রাজাকাররা।

হুমায়ূন কবীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে এমবিবিএস পাস করেন। পাকিস্তানি হানাদার ঘাতক সেনারা ২৫ মার্চ রাত থেকে সারা দেশের নিরীহ বাঙালিদের হত্যায় মেতে ওঠে। হুমায়ূন কবীর তখন থাকতেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে। পরদিন তিনি হাতিরপুলে তাঁর বোনের বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকে যান গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। হানাদারদের প্রতিরোধ করতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ যুদ্ধে অংশ নেন। হুমায়ূন কবীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতে থাকেন। অবশ্য ছাত্রজীবন থেকে তিনি প্রায়ই গ্রামের বাড়িতে এসে এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা করতেন।

হুমায়ূন কবীরের জন্ম শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভোগা বকাউলকান্দি গ্রামে। বাবা নূরুল হক সরকার, মা বিলকিস বেগম। তিনি ছিলেন সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। চাঁদপুরের মতলব হাইস্কুল থেকে ১৯৬২ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও ১৯৬৪ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পান করে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এমবিবিএসেও মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। সছিলেন বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হুমায়ূন কবীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করছিলেন। এ কারণে তাঁর ওপর রাজাকারদের নজর পড়ে। নভেম্বরে তিনি ওষুধপত্র নিতে ঢাকায় এসেছিলেন। ওঠেন বোনের বাসায়। ঢাকার পরিস্থিতি তখন বেশ খারাপ। প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ দেওয়া হচ্ছিল। সেদিন ছিল ১৫ নভেম্বর। হুমায়ূন কবীরের বোনের প্রতিবেশী ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক শহীদ আজাহারুল হক। তিনিও গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। তাঁরা দুজন বাড়ি থেকে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় রাজাকার-আলবদরের দল এসে তাঁদের একটি জিপে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন নটর ডেম কলেজের কাছে কালভার্টের নিচে তাঁদের চোখ, হাত-পা বাঁধা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। তাঁরা চিরনিদ্রায় শায়িত আজিমপুর কবরস্থানে।

গ্রন্থনা: আশীষ-উর-রহমান, ঢাকা।