বিজ্ঞাপন
default-image

মহান মুক্তিযুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অগ্রগণ্য নবাবগঞ্জ কলেজের উপাধ্যক্ষ মনিমুল হক। এলাকার ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় আলোকিত করতে সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯৫৫ সালে শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় নবাবগঞ্জ কলেজ। প্রথম তিন বছর তিনি এখানে বিনা বেতনে কাজ করেছেন। শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য গরুর গাড়ি ও নৌকায় করে গ্রামে যেতেন। বাড়ি বাড়ি ধরনা দিয়ে সন্তানদের কলেজে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করতেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে নবাবগঞ্জ কলেজটি জাতীয়করণ হয়। ২০২০ সালে প্রকাশিত কলেজের বার্ষিকী সাময়িকী অরুণাভতে এক লেখায় বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম উল্লেখ করেন, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ইতিহাসে শহীদ মনিমুল হক এক আলোকবর্তিকা। তিনি ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। মনিমুল হক শুধু শিক্ষাবিদই ছিলেন না, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। তাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রোষানলে পড়েন তিনি। আলবদরদের সহায়তায় একাত্তরের জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে হানাদার সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের একটি কক্ষে অনেকের সঙ্গে তাঁকেও আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে ২৭ নভেম্বর রাতে তাঁকে অজ্ঞাত কোনো জায়গায় নিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ পাওয়া যায়নি।

শহীদ মনিমুল হকের জন্ম ১৯২০ সালে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটী মহল্লায় তাঁর পৈতৃক বাড়ি। বাবা এমাজ উদ্দিন অবিভক্ত ভারতের মালদা জেলা আদালতের আইনজীবী ছিলেন। মনিমুল হক ১৯৩৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি সরকারের খাদ্য বিভাগের পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৪ সালে সেই চাকরি ছেড়ে কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন ও অধ্যাপনায় যুক্ত হন। বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থে মনিমুল হকের সংক্ষিপ্ত জীবনী রয়েছে।

নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কলেজে ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর ২৭ নভেম্বর শহীদ মনিমুল হক প্রয়াণদিবস পালিত হয়ে আসছে। তাঁর নামে কলেজের একাডেমিক ও পরীক্ষা ভবনের নামকরণ করা হয়েছে। পৌরসভার উদ্যোগে শহরের একটি সড়কের নামকরণ হয়েছে ‘শহীদ মুনিমুল হক’ সড়ক।

মনিমুল হকের ভাতিজি শিক্ষিকা সেলিনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর চাচার স্ত্রী নাসেহা হক, তাঁদের দুই ছেলে ময়নুল হক ও মুজিবুল হক এবং দুই মেয়ে নাসিমা হক ও আনিসা হক সবাই মারা গেছেন। মনিমুল হকের কিছু পাকিস্তান সমর্থক ছাত্র ও শিক্ষক তাঁকে হানাদার সেনাদের কাছে ধরিয়ে দেয়। তিনি এক সহবন্দীর কাছে তাঁর কোট ও চশমা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে দিয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের কাছে পাঠানোর জন্য। স্বাধীনতার পর সেই কোট ও চশমা তাঁরা পেয়েছিলেন। সেই স্মৃতিনিদর্শনগুলো পরে তাঁরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দান করেছেন।

গ্রন্থনা: আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ