বিজ্ঞাপন
default-image

ফজলুল হক ছিলেন লালমনিরহাটের আদিতমারীর ভেলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (বর্তমানে ভেলাবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়) সহকারী শিক্ষক। দেশকে হানাদারমুক্ত করতে কলম ফেলে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে সদ্য বিবাহিত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে। দিনটি ছিল একাত্তরের ৬ জুন।

শহীদ ফজলুল হক এলাকায় ‘মানিক স্যার’ নামেই পরিচিত ছিলেন। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মসজিদপাড়া গ্রামে ১৯৪৬ সালে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন গ্রামের শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক আছের উদ্দিন আহমেদ ও রোকেয়া খাতুন দম্পতির প্রথম সন্তান। কালীগঞ্জের কাকিনার মহিমারঞ্জন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে এসএসসি ও ১৯৬৪ সালে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৬৮ সাল থেকে ভেলাবাড়ি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।

পাকিস্তানি হানাদার সেনারা গণহত্যা শুরু করলে ফজলুল হক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। একাত্তরের এপ্রিলে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। ৬ জুন কালীগঞ্জের ভোটমারি রেলস্টেশনের কাছে হানাদার ও রাজাকারদের ক্যাম্পসহ স্থানীয় ভাকারির পুলে অভিযানে গিয়েছিলেন তাঁরা। একপর্যায়ে ফজলুল হক ও তাঁর সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হন। ওই রাতেই প্রচণ্ড নির্যাতন করে হত্যা করে তাঁদের ভোটমারি বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দেওয়া হয়। শহীদ হওয়ার মাত্র ১৭ দিন আগে ২০ মে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের খালিসা বারাজান গ্রামের আজগার আলী সরকারের মেয়ে মজিদা খাতুনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে লালমনিরহাট–পাটগ্রাম–বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের পাশে কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের নামের তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছে ফজলুল হকের নাম।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন–সংক্রান্ত কালীগঞ্জ উপজেলা তালিকায় ফজলুল হকের নাম আছে ৯ নম্বরে। তাঁর ছোট ভাই নজরুল হক জানান, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাবা আছের উদ্দিন আহমেদকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠির সঙ্গে মহুকুমা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে দুই হাজার টাকার একটি চেকও পাঠানো হয়েছিল। তাঁর বাবা ১৯৭৬ সালে ও মা ২০০৭ সালে ইন্তেকাল করেন। পারিবারিক উদ্যোগে শহীদ ফজলুল হক স্মরণে স্থানীয় মসজিদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কাকিনা মহিমারঞ্জন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

গ্রন্থনা: আবদুর রব, লালমনিরহাট।