বিজ্ঞাপন
default-image

অমল কৃষ্ণ সোম ছিলেন যশোরের তুখোড় নাট্যাভিনেতা। একাত্তরে যশোর ইনস্টিটিউটের বি সরকার ঘূর্ণমান রঙ্গমঞ্চে মা নামের একটি স্বৈরশাসনবিরোধী নাটকে অভিনয় করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তোপের মুখে পড়েন অমল সোম। নাটকের সব শিল্পীর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়ার বাড়ি ঘেরাও করে অমল কৃষ্ণ সোম ও তাঁর ছোট ভাই অরুণ কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি ঘাতক সেনাবাহিনী। এরপর দুই ভাইয়ের কেউ আর ফিরে আসেননি।

যশোর শহরে জিলা স্কুলের সামনে ষষ্ঠীতলাপাড়া মন্দিরের পাশে অমল কৃষ্ণ সোমের পরিবারের বসবাস। সম্প্রতি ওই বাড়িতে কথা হয় অমল কৃষ্ণ সোমের মেজ ছেলে পল্লব কুমার সোমের সঙ্গে। কথা হয় তাঁর মা রেবা রানী সোমের সঙ্গেও। তাঁর বয়স এখন প্রায় ৭৫। অমল সোমকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন রেবা রানী।

রেবা রানী বলেন, ‘একাত্তরের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তিনটি জিপ এসে থামে বাড়ির সামনে। বুটের শব্দ বাড়ির চারপাশে। সবাই আতঙ্কিত। ভেতর থেকে শক্ত করে দরজা এঁটে দেওয়া হলো। তখন বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা। অমল সোম নিজেই দরজা খুলতে এগিয়ে যান। পাকিস্তানি ঘাতক সেনারা তাঁকে ধরে বাড়ির ভেতরে একটি কক্ষে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পাশের ঘর থেকে ছোট ভাই অরুণ সোমকেও ধরে আনা হয়। অরুণের ঘরে ছিল একটি পাখি শিকারের এয়ারগান। এই এয়ারগান দিয়ে আমরা পাকিস্তানিদের গুলি করে হত্যা করছি, এমন অভিযোগ তুলে বাড়ির ভেতরেই অরুণকে বেদম মারপিট করে পাকিস্তানি সেনারা। এক ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরপর দুই ভাইকে জিপে তুলে সেনানিবাসের দিকে নিয়ে যায়। এরপর তাঁরা আর ফিরে আসেননি।’

অমল সোমকে যখন নিয়ে যায়, তখন বড় ছেলের বয়স ১১ বছর আর সবচেয়ে ছোট মেয়ের বয়স ছয় মাস। ছয় ছেলে-মেয়ে নিয়ে কঠিন সময় পার করেন তাঁর স্ত্রী রেবা রানী সোম। মেজ ছেলে পল্লব সোম এখন মাগুরা জেলার আড়পাড়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। অমল কৃষ্ণ সোমের পরিচিতি রয়েছে বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে।

রেবা রানী সোম বলেন, ‘১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে দুই হাজার টাকার একটি চেক দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আর কোনো সহায়তা পাইনি। কোনো সরকারি স্বীকৃতিও নেই। এমনকি বয়স্ক ভাতাও পাই না।’ রেবা রানী জানালেন, একাত্তরের ৪ মার্চ যশোর ঈদগাহে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত বাংলাদেশের যে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল, সেটি তিনিই সেলাই করেছিলেন।

গ্রন্থনা: মনিরুল ইসলাম, যশোর