বিজ্ঞাপন
default-image

গোলাম সারোয়ার খান সাধন ছিলেন রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী। তিনি ভালো আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন করতেন। ছাত্রজীবনে কলেজের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে যেকোনো দুর্যোগে, আন্দোলনে গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গণসংগীত গেয়ে পথে নেমেছেন তিনি। বহুমুখী প্রতিভা, জনকল্যাণকর ও সাংগঠনিক দক্ষতায় গোলাম সারোয়ার পাবনার মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সাধন হাতে অস্ত্র তুলে নেন। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে শুরু করেন সম্মুখযুদ্ধ। একপর্যায়ে রাজাকাররা তাঁকে হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের কাছে ধরিয়ে দেয়। ঘাতকেরা নগরবাড়ী ফেরিঘাটের এক টিকিট কাউন্টারে গোলাম সারোয়ার ও তাঁর সঙ্গীদের চার দিন আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন করে। তারপর হত্যা করে যমুনায় লাশ ফেলে দেওয়া হয়।

শহীদ গোলাম সারোয়ারের জন্ম ১৯৪৯ সালে, বাড়ি পাবনা শহরের কালাচাঁদ পাড়ায়। বাবা আবদুল হামিদ খান, মা সুফিয়া খান। ১৯৬৫ সালে রাধানগর মজুমদার একাডেমি থেকে মাধ্যমিক, এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। শৈশব থেকেই তিনি ভালো গান গাইতেন। স্কুলে স্কাউট ছিলেন। কলেজজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহে পাবনা শহরে গোলাম সারোয়ার গলায় হারমোনিয়াম বেঁধে সামনে ব্যানার ঝুলিয়ে গান গেয়ে অসহায় মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে তাঁর জীবনী প্রকাশিত হয়েছে।

পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থের লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম। তিনি গোলাম সাধন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। তিনি প্রথম আলোকে জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সাধন প্রিয় হারমোনিয়ামটি মায়ের কাছে রেখে এপ্রিলে ভারতে যান যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। আগস্টে দেশে ফিরে পাবনায় বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। রাজাকাররা ৬ সেপ্টেম্বর তাঁদের পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের ধরিয়ে দেয়। ১০ সেপ্টেম্বর গোলাম সারোয়ার খান সাধন, আলমগীর কবীর স্বপন ও সাচ্চু নামের তিন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। গোলাম সাধনের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৭২ সালের ১ জুলাই পাবনা শহরে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘শহীদ সাধন সংগীত মহাবিদ্যালয়’।

গ্রন্থনা: সারোয়ার মোর্শেদ, পাবনা