বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট চিকিৎসক খ আ জ ম নূরুল ইমাম। সেনানিবাস থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। বিষয়টি জেনে ফেলে হানাদার পাকিস্তানি সেনারা। এরপর মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা।

শহীদ খন্দকার নূরুল ইমামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামে। বাবা খন্দকার আবদুস সাত্তার ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। মা মেহের-উন-নিছা গৃহিণী। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। আর্থিকভাবে তাঁরা বেশ সচ্ছল। সংস্কৃতিমনা ঐতিহ্যবাহী পরিবার হিসেবে এলাকায় তাদের পরিচিতি রয়েছে। নূরুল ইমাম শৈশব থেকেই ভালো গান ও মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। খেলাধুলায় অংশ নিতেন। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৬৪ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এমবিবিএস পাস করে একাত্তরে সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে যোগ দেন।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। তখন নূরুল ইমামের সঙ্গে পাশাপাশি থাকতেন ক্যাপ্টেন চিকিৎসক জাহাঙ্গীর হোসেন। তাঁরও বাড়ি ছিল রাজবাড়ীর পাংশায়। হানাদার সেনারা গণহত্যা শুরু করলে তাঁরা দুজন পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এ পরিকল্পনার কথা জেনে যায় তৎকালীন সেনা গোয়েন্দা সংস্থা। একপর্যায়ে তাঁদের গুলি করে হত্যা করে মরদেহ মাটিচাপা দেয় বর্বর সেনারা। তবে এ হত্যাকাণ্ডের নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি। নূরুল ইমামের ডাকনাম ছিল তুর্কি। তিনি বিয়ে করেননি। চলতি বছর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে।

নূরুল ইমামের বড় ভাইয়ের মেয়ে খন্দকার শামীমা হাসান বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের বধ্যভূমি থেকে শহীদের দেহাবশেষ তোলা হয়। তাঁর দাদি অর্থাৎ নূরুল ইমামের মা খবর পেয়ে ময়নামতি সেনানিবাসে ছুটে যান। তিনি ছেলেকে একটি ঘড়ি কিনে দিয়েছিলেন। শহীদ হওয়ার সময় তাঁর হাতে ঘড়িটি ছিল। বধ্যভূমি থেকে দেহাবশেষ তোলার পর হাতের সেই ঘড়ি দেখেই মরদেহ শনাক্ত করা হয়। এরপর সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

শামীমা হাসান বলেন, ‘গ্রামে আমাদের নিজেদের জায়গায় আমার বাবা আইনজীবী খন্দকার নূরুল হাসান চাচার নামে ১৯৮৮ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। পরে এটি জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয়েছে শহীদ লে. ডা. নূরুল ইমাম বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’
গ্রন্থনা: এজাজ আহম্মেদ, রাজবাড়ী