বিজ্ঞাপন
default-image

আমজাদ হোসেন ছিলেন লালমনিরহাটের আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (বর্তমানে উচ্চবিদ্যালয়) সহকারী শিক্ষক। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। এরপর দেশে ফিরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। একাত্তরের ৬ জুন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে শহীদ হন এই তরুণ শিক্ষক।

শহীদ আমজাদ হোসেন আদিতমারীতে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর বিয়ের কথা হচ্ছিল, কিন্তু এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি যুদ্ধে চলে যান। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের চাপারতল গ্রামে ১৯৪৫ সালে তাঁর জন্ম। আবদুর রহমান ও জিয়ারন নেছা দম্পতির চার ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। বাবা–মা বেঁচে নেই, তবে সহোদরেরা আছেন। তাঁদের কাছ থেকেই এসব তথ্য জানা গেছে।

আমজাদ হোসেন ১৯৬২ সালে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জের কাকিনার মহিমারঞ্জন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে মাধ্যমিক এবং কুড়িগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ১৯৬৬ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এরপর ১৯৬৮ সালে আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আমৃত্যু এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

আমজাদ হোসেন শিক্ষকতার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতি করতেন। কালীগঞ্জের কাকিনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ছাত্র–যুবকদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। হানাদাররা গণহত্যা শুরু করলে তিনি যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। নিজেও ভারতে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।

আমজাদ হোসেন ৬ জুন রাতে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কালীগঞ্জের ভোটমারী রেলস্টেশনের কাছে একটি সেতু উড়িয়ে দেওয়ার অভিযানে যান। এ সময় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ শুরু হয়। উভয় পক্ষের ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে আমজাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে আহত অবস্থায় তাঁরা ধরা পড়েন। প্রচণ্ড নির্যাতনের পর হত্যা করে ওই রাতেই লাশ ভোটমারী বধ্যভূমিতে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

স্বাধীনতার পর কালীগঞ্জের এই ভোটমারী বধ্যভূমি গণকবর হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এটি লালমনিরহাট জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি বা গণকবর। কালীগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের নামের তালিকায় ১১ নম্বরে রয়েছে এই শহীদের নাম। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়নসংক্রান্ত কালীগঞ্জ উপজেলা তালিকায় শহীদ আমজাদ হোসেনের নাম রয়েছে ১০ নম্বরে।

আমজাদ হোসেনের ছোট ভাই কালীগঞ্জের চাপারতল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাবা আবদুর রহমানকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি এবং দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমজাদ হোসেনের পরিবারের সদস্যরা এখনো মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন।

গ্রন্থনা: আবদুর রব, লালমনিরহাট