বিজ্ঞাপন
default-image

দেশকে যাঁরা জীবনের চেয়েও বড় করে ভেবেছেন এমন একজন হচ্ছেন ডাক্তার আব্দুন নূর। দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও নিজের বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হননি। পাকিস্তানি ঘাতক সেনারা তাঁকে গর্তে নামিয়ে গুলি করে। সেখানেই মাটিচাপা দেয় তাঁকে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ভোলেননি। সেই বধ্যভূমিতে নির্মাণ করেছেন স্মৃতিফলক।

শহীদ চিকিৎসক আব্দুন নূরের জন্ম ১৯২১ সালের ৯ নভেম্বর মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। বাবার নাম খোরশেদ আলী।

মুক্তিযুদ্ধের আগে আব্দুন নূর বার্মা অয়েল কোম্পানির মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করতেন। একপর্যায়ে সেই কাজ ছেড়ে চলে আসেন নিজের এলাকায়। স্থানীয়ভাবে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা ও জনকল্যাণকর কাজ করতেন তিনি। সক্রিয় রাজনীতি না করলেও আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতেন। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নানা তথ্য ও খবরাখবর আদান–প্রদানের কাজ করতেন তিনি।

এ কারণে রাজাকারদের নজরদারি ছিল তাঁর প্রতি। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তাঁর লেখা একটি চিঠি ফাঁস হয়ে যায়। রাজাকারদের মাধ্যমে এই চিঠির তথ্যটি পৌঁছে যায় হানাদার বাহিনীর কাছে। এরপরই পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুরের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর ওপর চলে নানা ধরনের নির্যাতন। নির্মম নির্যাতনেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি ছিলেন সিদ্ধান্তে অটল। ঘাতক সেনারা একাত্তরের ২০ জুলাই বর্তমান শাহবাজপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজসংলগ্ন টিলায় কোমরসমান নিচু একটি গর্তে তাঁকে নামিয়ে দেয়। তারপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে। গর্তে লুটিয়ে পড়ে তাঁর নিথর দেহ। আব্দুন নূরের রক্তভেজা মরদেহ এই গর্তেই মাটিচাপা দেয় পাকিস্তানি হানাদাররা।

আব্দুন নূরের হত্যার স্থানটি এত দিন অনেকটা অরক্ষিত ছিল। স্থানীয়দের উদ্যোগে স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে জায়গাটিকে ‘বধ্যভূমি’ নাম দিয়ে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে লেখা আছে তাঁর জীবনদানের কাহিনি। এতে অর্থায়ন করেছে শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুন নূরের নামে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘শহীদ ডা. আব্দুন নূর ফাউন্ডেশন’। আর কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও শাহবাজপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আহমেদ জুবায়ের।

জানা গেছে, শহীদ আব্দুন নূরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে এক ছেলে মারা গেছেন। বাকি ছেলেমেয়ে প্রবাসী।

স্মৃতিফলক স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে শহীদ ডা. আব্দুন নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, গবেষক ও প্রকাশক মোস্তফা সেলিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে একজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্মৃতিজড়িত বধ্যভূমি সংরক্ষণের কাজটি করতে পেরে কিঞ্চিৎ হলেও দায় শোধের সুযোগ পেয়েছি। এই স্কুলের হাজারো শিক্ষার্থী এখন তাঁর আত্মদানের ইতিহাস জেনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হবে।’

গ্রন্থনা: আকমল হোসেন, মৌলভীবাজার