বিজ্ঞাপন
default-image

সেদিন ছিল একাত্তরের ২২ নভেম্বর। সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। এমন সময় একদল পাকিস্তানি হানাদার সেনা মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানের বাড়ি ঘিরে ফেলে। তারা আতিয়ার রহমানকে বাড়ি থেকে তুলে তেরশ্রী বাজারে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় তেরশ্রী এলাকাবাসীর বিশেষ ভূমিকা ছিল। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ এলাকার প্রতি পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের আলাদা নজর ছিল। অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাবার দেওয়া ও অস্ত্রপাতি রাখার ব্যবস্থা করতেন। কলেজের যুবক ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে উৎসাহ দিতেন। যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে যেতে সহায়তা করতেন।

যুদ্ধের শেষ দিকে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী তেরশ্রীতে হামলা চালায়। সেদিন হানাদার ও রাজাকাররা ওই এলাকায় ব্যাপক লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা চালায়। অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন নিরপরাধ মানুষ এই ঘৃণ্য গণহত্যার শিকার হন।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আতিয়ার রহমানের জন্ম মানিকগঞ্জ মহকুমা সদরের কেওয়ারজানি গ্রামে ১৯৩৮ সালে। বাবা শেখ জামাল উদ্দিন ছিলেন কৃষক, মা নছিরন বেগম গৃহিণী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। শিক্ষা শেষে ঢাকার নবাবগঞ্জের গালিমপুর সোনাহাজরা আলিয়া মাদ্রাসায় আতিয়ার রহমান কর্মজীবন শুরু করেন। তবে কর্তৃপক্ষ ও সহকর্মীদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর ১৯৬৭ সালে ঘিওরের তেরশ্রী কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তথ্য চেয়ে প্রথম আলোয় বিজ্ঞাপন ছাপা হলে আতিয়ার রহমান সম্পর্কে তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছেন মানিকগঞ্জের খাবাশপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের নিয়ে তাঁর মাঠপর্যায়ে গবেষণার তথ্য নিয়ে প্রকাশিত স্মৃতি ও শ্রুতিতে মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ বইতে আতিয়ার রহমানের জীবনী ও তথ্য রয়েছে।

মানিকগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডার প্রকৌশলী তোবারক হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ আতিয়ার রহমান সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও নানাভাবে সহায়তা করেছেন। তাঁর স্মরণে কেওয়ারজানি রাস্তার মোড়ে ২০০০ সালে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১২ সালে তেরশ্রী এলাকার পাশে পয়লা মোড় এলাকায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে সেখানে শহীদ অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানের নাম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

আতিয়ার রহমান ১৯৬৮ সালে টাঙ্গাইলে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম লাইলী বেগম। একমাত্র সন্তান আবু মোহাম্মদ আরিফ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। তিনি বলেন, শহীদ হিসেবে তাঁর বাবাকে সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এটাই তাঁদের সান্ত্বনা।

গ্রন্থনা: আব্দুল মোমিন, মানিকগঞ্জ।