বিজ্ঞাপন
default-image

সামনে তাঁর কত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল, প্রাণবন্ত জীবন ছিল। কিছুই তিনি পেলেন না। কিছুই তিনি উপভোগ করতে পারলেন না। দেখে যেতে পারলেন না স্বাধীন বাংলাদেশ।—এই আক্ষেপ ক্যাপ্টেন এ টি এম আলমগীরের স্ত্রী নাদিরা আলমগীরের।

এ টি এম আলমগীর ছিলেন পিআইএর ক্যাপ্টেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। মার্চের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে একটা আলাদা এয়ারলাইনস গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তিনি। পিআইএর উড়োজাহাজগুলো কোথায় লুকিয়ে রাখা হবে, সে বিশদ পরিকল্পনাও ছিল তাঁর। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন করতে পারেননি এই স্বাধীনতাকামী বৈমানিক। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই পাকিস্তানি সৈনিকেরা তাঁকে বন্দী করে, তারপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর।

স্বামীকে নিয়ে নাদিরা আলমগীরের একটি লেখা আছে স্মৃতি: ১৯৭১–এর পুনর্বিন্যাসকৃত তৃতীয় খণ্ডে (সম্পাদনা রশীদ হায়দার, বাংলা একাডেমি)। সেখান থেকে জানা যায়, দৃঢ় চিত্তের সাহসী মানুষ ছিলেন আলমগীর। সে সময় পিআইএতে বাঙালি ও পাকিস্তানি বৈমানিকদের মধ্যে অনেক বৈষম্য করা হতো। এ নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন এ টি এম আলমগীর। একটা পর্যায়ে চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতিবাদ করে তিনি পাকিস্তান পাইলট অ্যাসোসিয়েশন থেকে বেরিয়ে ইস্ট পাকিস্তান পাইলট অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। এই সংগঠন থেকেই বৈষম্যের প্রতিবাদে আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন তিনি।

মার্চের শুরু থেকেই এ টি এম আলমগীরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু করলে তিনি নয়াবাজার এলাকায় অগ্নিসংযোগের ছবি তুলেছিলেন তাঁর ক্যামেরায় টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করে। তাঁকে ধরার জন্য পাকিস্তানি সৈন্যরা মার্চে দুইবার তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল। তখন তিনি বন্ধুদের সঙ্গে সিরাজগঞ্জে পালিয়ে যান। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন। এ জন্য এপ্রিলে তিনি ঢাকায় আসেন পরিবারকে গ্রামে নিয়ে যেতে। এর ফাঁকে ফাঁকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য–সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু ভাগ্য এবার আর সহায় হলো না, ২৩ এপ্রিল তিনি পাকিস্তানি সৈনিকদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর আর ক্যাপ্টেন আলমগীরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ক্যাপ্টেন আলমগীরকে যখন পাকিস্তানি সৈনিকেরা তুলে নিয়েছিল, তখন তাঁর মেয়ের বয়স আড়াই বছর আর ছেলের বছরখানেক। এই দুই সন্তানকে নিয়ে কঠিন জীবন সংগ্রাম করেছেন নাদিরা আলমগীর। ছেলে–মেয়েদের মনে বাবার বিশেষ কোনো স্মৃতিই নেই। তবু এই ভেবে তাঁরা গর্বিত যে তাঁরা স্বাধীন দেশের নাগরিক, যে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের আপনজন।


গ্রন্থনা: আশীষ-উর-রহমান