বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল একযোগে আক্রমণ চালাল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন হালদার মো. আবদুল গাফফার (এম এ গাফফার হালদার)। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করছেন। পাকিস্তানি সেনারা প্রায় দিশাহারা। বিজয় প্রায় হাতের মুঠোয়। এ সময় হলো বিপর্যয়।

অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল) সালদা নদী রেলস্টেশন দখল করার পরিকল্পনা করেন। তাঁর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল ৭ অক্টোবর সালদা নদী ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা নয়নপুর থেকে সালদা নদী রেলস্টেশনে আশ্রয় নেয়। হালদার মো. আবদুল গাফফার তাঁর দল নিয়ে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করছিলেন। তখন মেজর সালেক চৌধুরীর (বীর উত্তম) নেতৃত্বাধীন দলের গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে তাঁরা পেছনে সরে যেতে বাধ্য হন। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সেদিনের আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এরপর মেজর খালেদ মোশাররফ সালদা নদী দখলের দায়িত্ব অর্পণ করেন আবদুল গাফফারের ওপর। ৮ অক্টোবর তিনি তাঁর দল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আবার আক্রমণ চালান। সারা দিন সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।

পরদিন ৯ অক্টোবর আবদুল গাফফার যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন করে নতুন পরিকল্পনা নেন। তাঁর এই পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হয়। প্রথমে এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা চারটি দলে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের পাল্টা আক্রমণ চালায়। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দুটি দল সালদা নদী রেলস্টেশনে আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি শিকার করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সালদা নদী রেলস্টেশন মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন। পরবর্তী সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও ওই রেলস্টেশন পুনর্দখল করতে পারেনি।

হালদার মো. আবদুল গাফফার ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। ২৫ মার্চ তিনি অবস্থান করছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ২৭ মার্চ তাঁরা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। মন্দভাগ সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে কে ফোর্সের অধীন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে বিলোনিয়া, ফেনী ও চট্টগ্রামের নাজিরহাট এলাকায় যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান