বিজ্ঞাপন
default-image

রাতে হামিদুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে বাংলাদেশের ভেতরে আসেন। সমবেত হন এফইউপিতে। তাঁরা ছিলেন কয়েকটি দলে (কোম্পানি) বিভক্ত। ৬০০ গজ দূরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষাব্যূহ।

আনুমানিক বিকেল সাড়ে তিনটা। তারিখ ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর।

পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সবার আগে চার্লি কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের জন্য এগিয়ে যান। দুই উপদলের (প্লাটুন) একটি বাঁ দিক দিয়ে এবং অপরটি ডান দিক দিয়ে। মাঝে থাকে ডেফথ প্লাটুন। এ প্লাটুনে ছিলেন হামিদুর রহমান।

কিন্তু অ্যাসল্ট ফরমেশনে (আক্রমণ শুরু) যাওয়ার আগেই তাঁরা আক্রান্ত হন। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গোলাগুলি শুরু করে। এর ব্যাপকতা এত বেশি ছিল যে ডান-বাঁ, দুই প্লাটুনেরই অগ্রযাত্রা থমকে যায়।

এরপর মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার অ্যান্ড মুভ পদ্ধতিতে সামনে এগোতে থাকেন। বাঁ দিকের মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর অবস্থানের একদম কাছে পৌঁছান। এ সময় তাঁদের দলনেতা ও প্লাটুন হাবিলদার পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে আহত হন।

ডান দিকের মুক্তিযোদ্ধারাও বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননি। উঁচু টিলার ওপর থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এইচএমজির প্রায় নিখুঁত গুলিবর্ষণের কারণে তাঁরা এগোতে পারেননি। ওই এইচএমজি পোস্ট ধ্বংসের চেষ্টা করেন তাঁরা, কিন্তু পারেননি। বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ওই এইচএমজির গুলিতে হতাহত হন।

এ অবস্থায় ডেফথ প্লাটুন এগিয়ে আসে। প্লাটুনের সুইসাইডাল গ্রুপের ওপর দায়িত্ব পড়ে ওই এইচএমজি পোস্ট ধ্বংস বা নিউট্রালাইজ করার। এ গ্রুপে ছিলেন অসমসাহসী হামিদুর রহমান। তিনি সুইসাইডাল গ্রুপের দুটি এলএমজির কাভারিং ফায়ারের ছত্রচ্ছায়ায় অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পাকিস্তানি এইচএমজি পোস্টের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হন।

ক্রল করে ১০ গজের মধ্যে পৌঁছে তিনি সেখানে হ্যান্ডগ্রেনেড ছোড়েন। তাঁর নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড নিখুঁত নিশানায় পড়ে। এইচএমজি থেকে গুলি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি ওই বাংকারে চড়াও হন। এমন সময় পাশের আরেকটি বাংকারে থাকা পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। তাঁর দিকে ছুটে আসে একঝাঁক গুলি। এই গুলির ঝাঁক থেকে তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। তাঁর শরীর প্রায় ঝাঁজরা হয়ে যায়। নিথর ও ঝাঁজরা দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

এ ঘটনা মৌলভীবাজার জেলার ধলই বিওপিতে। মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন হামিদুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেননি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ২ নভেম্বর তাঁরা আবার সেখানে আক্রমণ চালান। ৩ নভেম্বর ধলই মুক্ত হয়। তখন তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে সমাহিত করা হয়। স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর তাঁর দেহাবশেষ ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান