বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ঘটনা কানাইঘাটের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে হযরত আলী অংশ নেন। তিনি প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনাসদস্য ছিলেন। কানাইঘাট সিলেট জেলার একটি উপজেলা। জৈন্তাপুর-জকিগঞ্জ সংযোগ সড়কে সুরমা নদীর তীরে ছিল উপজেলা সদরের অবস্থান। সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী—উভয়ের কাছেই কানাইঘাট ছিল সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর কানাইঘাটে যুদ্ধ হয়। এখানে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানি, পাকিস্তানি স্কাউটস দলের এক প্লাটুন মিলিশিয়া এবং তাদের সহযোগী বেশ কিছু রাজাকার।

২২ নভেম্বর জেড ফোর্সের অধীন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গড়া মুক্তিবাহিনী কানাইঘাটসংলগ্ন গৌরীপুরে পৌঁছায়। তখন পাকিস্তানি বাহিনী তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে এগিয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাও করে। এরপর প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। এখানে কয়েক দিন যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি বাহিনী প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়। কানাইঘাটের যুদ্ধে হযরত আলী যথেষ্ট সাহস, দক্ষতা ও রণকৌশলের পরিচয় দেন। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ১১ জন শহীদ ও হযরত আলীসহ ২০ জন আহত হন। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে ৫০ জন নিহত, ২০ জন আহত ও ২৫ জন আত্মসমর্পণ করে। কানাইঘাট মুক্ত হওয়ায় মিত্রবাহিনীর পক্ষে সিলেটের দিকে চূড়ান্ত অভিযান পরিচালনা করা সহজ হয়ে ওঠে।

হযরত আলী এর আগে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুরসহ কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেছেন। তিনি মূলত মেশিনগান চালাতেন।

হযরত আলী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ বালুচ এবং ২২ এফএফ রেজিমেন্ট তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায়। তখন তাঁরা প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাঁরা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে চৌগাছায় সমবেত হন। এরপর ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান