বিজ্ঞাপন
default-image

কুড়িগ্রাম থেকে সড়ক ও রেলপথ মোগলবাছার ওপর দিয়ে উলিপুর হয়ে চিলমারী পর্যন্ত বিস্তৃত। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দিক থেকে সড়কের চেয়ে রেলপথকেই বেশি নিরাপদ মনে করত। তখন নিজেদের যাতায়াত, রসদ ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনের কাজ তারা রেলপথেই সারত।

নভেম্বরের মাঝামাঝি মনসুর আলী সহযোদ্ধাদের নিয়ে মোগলবাছা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে যাওয়া রেলপথের অর্জুনমালায় রেলসেতুতে বিস্ফোরক বসান। এতে ট্রেনের কয়েকটি বগি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক পাকিস্তানি ও তাদের সহযোগী হতাহত হয়।

এখন জানা যাক, সৈয়দ মনসুর আলীর নিজস্ব বয়ানে (১৯৭৩) মুক্তিযুদ্ধকালের কিছু ঘটনার কথা:

‘২ নভেম্বর যাত্রাপুর বাজারে তিনজন পাকিস্তানি সেনা ও নয়জন রাজাকার এলে তাদের আক্রমণ করি। তারা সবাই সংঘর্ষে নিহত হয়। এরপর ওই এলাকার সব রাজাকারকে জনগণের সহায়তায় ৯ নভেম্বর আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়। সেদিন সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

‘এদিকে যাত্রাপুরে সংঘর্ষের খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম থানার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ রাজাকার স্বেচ্ছায় তাদের হাতিয়ারসহ আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণের খবর আশপাশ এলাকার রাজাকারদের মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে রাজাকাররা দলে দলে আত্মসমর্পণ করতে থাকে।

‘কুড়িগ্রাম শহরের নিকটবর্তী মোগলবাছা ইউনিয়নে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি ছিল। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তিনবার পাকিস্তানিদের আক্রমণ করি। তৃতীয়বারের সংঘর্ষের সময় উলিপুরগামী ট্রেনের দুটি বগি ডিনামাইট দিয়ে বিচ্ছিন্ন করি। এতে প্রায় ৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী হতাহত হয়।

‘মোগলবাছা ইউনিয়নের অর্জুনমালায় রেলসেতুর নিচে আমরা ডিনামাইট ফিট করেছিলাম। পাকিস্তানি সেনাবাহী ট্রেন ওই স্থান অতিক্রম করার সময় ডিনামাইট বিস্ফোরিত হয়। এ অপারেশনে আমাদের মীর নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

‘৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার যোশির নির্দেশে আমরা মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে কুড়িগ্রাম শহরে আক্রমণ করি। যৌথ বাহিনীর দূরপাল্লা ও ভারী কামানের গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে আক্রমণের সূচনা হয়। কিন্তু পাকিস্তানিরা তেমন প্রতিরোধ না করে পালিয়ে যায়।’

মনসুর আলী পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর ফ্লাইট সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে। ১৯৭১-এর প্রথম দিক থেকে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাবসেক্টরে সরাসরি যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান