বিজ্ঞাপন
default-image

দরিদ্র কৃষকের সন্তান সিরাজুল হক কৃষিকাজ করতেন। অনিয়মিত মুজাহিদ বাহিনীতেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল ২৭-২৮ বছর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রথমে নিজ এলাকা চৌদ্দগ্রামে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। এ সময় চৌদ্দগ্রামে বেশ কয়েকটি প্রতিরোধযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৪ মে ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩৯ বালুচ রেজিমেন্টের একাংশ চৌদ্দগ্রাম বাজার আক্রমণ করে। তখন সেখানে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। সিরাজুল হক এ যুদ্ধে অংশ নিয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩০ থেকে ৩৫ জন নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর আটজন শহীদ হন। এরপর ২৬ মে, ২৯ মে ও ৩০ মে তারিখে সেখানে আবার যুদ্ধ হয়।

চৌদ্দগ্রামের পতন হলে সিরাজুল হক প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতে চলে যান। সেখানে তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর তিনি যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের মন্দভাগ সাব-সেক্টরে। এই সাব-সেক্টর এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দভাগ রেলস্টেশন থেকে কুটি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বায়েক, কাইমপুর, কসবা থানার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত মন্দভাগ সাব-সেক্টরে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

সেপ্টেম্বরে একদিন মন্দভাগ এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় ধরনের একটা যুদ্ধ হয়। সেদিন একটা বাংকারে সিরাজুল হকসহ তাঁর তিন সহযোদ্ধা অবস্থান নিয়ে সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করছিলেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা ওই বাংকার চিহ্নিত করে মর্টারের গোলাবর্ষণ করে। গোলার আঘাতে সিরাজুল হকসহ চারজনই শহীদ হন। পরে অন্য সহযোদ্ধারা তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে যান। মেলাঘরে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের পাশে তাঁদের সমাহিত করা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান