বিজ্ঞাপন
default-image

সাজ্জাদ আলী জহির ১৯৬৯ সালের শেষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাকুল সামরিক একাডেমিতে সিনিয়র ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আগস্ট মাসের শেষে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। কীভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, তাঁর বয়ানেই তা শোনা যাক:

‘কাকুল সামরিক একাডেমিতে বাঙালি আমরা কয়েকজন প্রশিক্ষণরত ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল অথবা মে মাসে একাডেমি থেকে বাঙালি তিন-চারজন পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন এস এম ইমদাদুল হক (বীর উত্তম, যুদ্ধে শহীদ)।

‘তাঁর ও আমার একই সঙ্গে পালানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু একসঙ্গে একই কোম্পানি থেকে পালিয়ে গেলে দুজনেরই ধরা পড়ার সম্ভাবনা। তাই তিনি এবং অন্য কোম্পানি থেকে মোদাসসের (মোদাসসের হোসেন খান বীর প্রতীক) একসঙ্গে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

‘...তাঁর পালিয়ে যাওয়ার খবর আমি চেপে রাখি। তিন-চার দিন পর খবরটা প্রকাশ পায়। তখন আমার কোম্পানি কমান্ডার এ ব্যাপারে আমাকে অভিযুক্ত করে কোর্ট মার্শাল করার হুমকি দেন। শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি।

‘আগস্ট মাসে আমি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন লাভ করি। আমার পোস্টিং হয় ৭৮ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট শিয়ালকোটে। একাডেমি থেকে শিয়ালকোটে যাওয়ার পথে আমি দুই দিন পিন্ডি অবস্থান করি। সেখানে দুই আত্মীয়সহ কয়েকজনের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আলাপ করি। তাঁরা আমাকে যথাসম্ভব উপদেশ দেন। তা পরবর্তী সময়ে আমার কাজে লেগেছিল। এরপর শিয়ালকোটে যাই। কয়েক দিন পর সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে যাই।’

সাজ্জাদ আলী জহির মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন সেপ্টেম্বর মাসে। এই সময় ভারত সরকার মুক্তিবাহিনীকে কয়েকটি ১০৫ এমএম গান (হাউইটজার) দেয়। তা দিয়ে মুক্তিবাহিনীর জন্য একটি ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি (গোলন্দাজ দল) গঠন করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় রওশন আরা (বা ২ ফিল্ড) ব্যাটারি।

এই ব্যাটারিতে অন্তর্ভুক্ত হন সাজ্জাদ আলী জহির। তিনি সহ-অধিনায়ক ছিলেন। রওশন আরা ব্যাটারিতে ছিল ছয়টি গান। অক্টোবর মাস থেকে এই ব্যাটারি ১০৫ এমএম কামান দিয়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সকে বিভিন্ন যুদ্ধে আর্টিলারি ফায়ার সাপোর্ট দিয়ে সহায়তা করে।

সাজ্জাদ আলী জহিরের পরিচালনায় রওশন আরা ব্যাটারি কয়েকবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে। সঠিক নিশানায় গোলাবর্ষণ করার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন। এর ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান