বিজ্ঞাপন
default-image

শামসুল হক ও তাঁর সহযোদ্ধারা রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে অবস্থান নিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। মুক্তিযোদ্ধারা সংকেতের অপেক্ষায় আছেন। এ সময় হঠাত্ পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ। ব্যাপক হারে গোলা এসে পড়তে থাকে শামসুল হকদের অবস্থানে। বিরামবিহীন ও ভয়াবহ সেই গোলাবর্ষণ। শামসুল হক তবু মনোবল হারালেন না। তাঁদের বিক্রম ও সাহস দেখে পাকিস্তানি সেনারা হতবাক হয়ে পড়ে। এ ঘটনা কানাইঘাটে ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।

কানাইঘাট ছিল মুক্তিবাহিনীর ৪ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন। সেক্টর অধিনায়ক ছিলেন মেজর সি আর দত্ত (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল)। তাঁর এক সাক্ষাত্কারে এ যুদ্ধের বিবরণ আছে। তিনি বলেন, ‘...কানাইঘাটে শত্রুদের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়ল। সকাল প্রায় সাড়ে ১০টায় মেজর রব, লেফটেন্যান্ট গিয়াস ও লেফটেন্যান্ট জহিরের অধীন মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে শত্রুসৈন্যদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। পাকিস্তানিরা রাস্তা না পেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে শুরু করল। যারা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল, তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে প্রাণ হারায়। নদীর পানি লাল হয়ে গিয়েছিল। অনেকে পানিতে ডুবে মারা যায়। ভীষণ শব্দে মাইনগুলো ফাটছিল। যারা চরখাই দিয়ে পালাতে চেষ্টা করেছিল, তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে প্রাণ হারায়। বেলা ১১টায় কানাইঘাট আমাদের দখলে এল।

‘কানাইঘাট যুদ্ধে পাকিস্তানিদের মৃতের সংখ্যা ছিল ৫০ জন। আহত ২০ জন। আমাদের পক্ষে শহীদ হয়েছে ১১ জন। আহত হয়েছিল ১৫ জন।

‘এত বড় দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি বলে যারা ভালো কাজ করেছে তাদেরকে উপাধিতে ভূষিত করার জন্য সর্বাধিনায়কের কাছে নাম পাঠিয়েছিলাম। তারা হলো মেজর রব, লেফটেন্যান্ট জহিরুল হক, সুবেদার মতিন, সুবেদার বাছর আলী, নায়েব সুবেদার শামসুল হক প্রমুখ।’

শামসুল হক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে কালবিলম্ব না করে অংশ নেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যাওয়ার পর প্রথম যুদ্ধ করেন জেড ফোর্সের অধীনে। পরে ৪ নম্বর সেক্টরে। ধামাই চা-বাগানের যুদ্ধে শামসুল হক অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এ যুদ্ধে তাঁর দলনেতা (কোম্পানি কমান্ডার) লেফটেন্যান্ট এস এম ইমদাদুল হক (বীর উত্তম) শহীদ হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান