সন্ধ্যা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। একটি দলে আছেন রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া। রাতের অন্ধকারে তাঁরা ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসেছেন। মধ্যরাতের আগেই পৌঁছেছেন দত্ত নগরে। সেখানে আছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি।
দত্তনগর কৃষি খামার চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার অন্তর্গত। এটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা। এখানে ছিল সরকারি কৃষি খামার। এই কৃষি খামার বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শক্তিশালী একটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করে। এ ঘাঁটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা সহযোগী রাজাকারদের নিয়ে সীমান্ত এলাকায় টহল দিত। নভেম্বরের প্রথম দিক থেকে মুক্তিবাহিনী সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর একের পর এক আক্রমণ করে। তাদের লক্ষ্য ছিল সীমান্ত এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনাদের বিতাড়ন করা।
তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিবাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ নভেম্বর ভোরে দত্তনগর কৃষি খামারের ওপর আক্রমণ চালান। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন তিনটি দলে (তিন কোম্পানি) বিভক্ত। একটি দল তেঁতুলিয়া, দ্বিতীয় দল নারায়ণপুর ও তৃতীয় দল হাসনাবাদের দিক থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দত্তনগর কৃষি খামারের ক্যাম্পে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। ত্রিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ যুদ্ধে রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া সাহস ও রণকৌশল দেখান। দু-তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাদের প্রবল প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। তখন তারা পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। নিজ এলাকায় প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। সেখানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে পাঠানো হয় উচ্চতর প্রশিক্ষণে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর ১১ নম্বর সেক্টরের মানকারচর সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন তিনি। কোদালকাটির যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট রণনৈপুণ্য দেখান। অক্টোবরে ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন বানপুর সাব-সেক্টরে যোগ দেন। নভেম্বরের শেষ দিকে তাঁকে দ্বিতীয় বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওয়ার কোর্সের প্রশিক্ষণ চলা অবস্থায় দেশ স্বাধীন হয়।
রওশন ইয়াজদানী ভূঁইয়া স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২
সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান