বিজ্ঞাপন
default-image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার লাতুমুড়া সীমান্ত এলাকা। ১৯৭১-এর ২২ জুন। সীমান্তের ওপারে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতা রাতে খবর পেলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল চন্দ্রপুর-লাতুমুড়ার দিকে আসছে। খবর পেয়েই তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই দলকে অ্যামবুশের সিদ্ধান্ত নিলেন।

মুক্তিযোদ্ধারা দলনেতার নির্দেশে দ্রুত প্রস্তুত হলেন। তিনটি উপদলে বিভক্ত তাঁরা। একটি দলে থাকলেন মোহাম্মদ সিদ্দিক। পরদিন ভোর হওয়ার আগেই তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করে অবস্থান নিলেন লাতুমুড়ার কাছে ইয়াকুবপুর-কুয়াপাইনা ও খৈনলে।

পাকিস্তানি সেনারা পথে এক স্থানে রাত যাপন করে সকালে এসে উপস্থিত হলো মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যামবুশ এলাকায়। ৫০ থেকে ১০০ গজের মধ্যে আসামাত্র গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। আকস্মিক আক্রমণে হকচকিত পাকিস্তানি সেনারা। এমন আক্রমণ তারা কল্পনাও করেনি। দিশাহারা হয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে গেল। আটজন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও তিনজন আহত হলো।

পাকিস্তানি সেনারা পেছনে সংগঠিত হয়ে পুনরায় এগিয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণ চালাল। মোহাম্মদ সিদ্দিক ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করলেন। তাঁদের বীরত্বে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। এরপর দিনভর দুই পক্ষে গোলাগুলি চলল। সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে যায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল তাদের আক্রমণ করে বেশ ক্ষতিসাধন করে।

পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে লাতুমুড়ার উত্তরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। পরদিন ২৪ জুন পাকিস্তানি সেনারা যখন নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরিতে ব্যস্ত, তখন মোহাম্মদ সিদ্দিক ও তাঁর সহযোদ্ধারা তাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালান। ওই আক্রমণে নিহত হয় আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দুজন আহত হন।

চন্দ্রপুর-লাতুমুড়া অ্যামবুশে মোহাম্মদ সিদ্দিক যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। মূলত তাঁদের দলের হাতেই পাকিস্তানি সেনাদের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।

মোহাম্মদ সিদ্দিক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। ১৯৭১-এর মার্চ মাসের মাঝামাঝি এই রেজিমেন্টের বেশির ভাগ সদস্যকে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। কিছু সদস্য থাকেন সেনানিবাসে। তিনি সেনানিবাসে ছিলেন। ২৫ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যান।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে ক্যাপ্টেন এম এ মতিনের (বীর প্রতীক, পরে ব্রিগেডিয়ার) নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জেলার মাস্তাননগর ও মিরসরাইয়ে যুদ্ধ করেন। ২০ এপ্রিল মিরসরাইয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি আহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান