বিজ্ঞাপন
default-image

গভীর রাতে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রবেশ করলেন বাংলাদেশের ভেতরে। তাঁদের নেতৃত্বে মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান। দ্রুত তাঁরা পৌঁছে গেলেন নির্দিষ্ট জায়গায়। তাঁরা অন্ধকারে শুরু করলেন পরিখা খননের কাজ। সকাল হওয়ার আগেই প্রস্তুতি শেষ করে অবস্থান নিলেন পরিখার ভেতর। সামনেই একটি রেলপথ। সময় গড়াতে লাগল। তাঁরা ওত পেতে ট্রেনের অপেক্ষায় আছেন। বেলা আনুমানিক ১১টা। একটু পর একটি ট্রেন আসতে দেখা গেল। মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিলেন। ট্রেনটি আওতার মধ্যে আসামাত্র গর্জে উঠল তাঁদের আরআর গান ও রকেট লঞ্চার। নির্ভুল গোলাবর্ষণে ট্রেনের বেশির ভাগ বগি বিধ্বস্ত ও অর্ধেক বগি লাইনচ্যুত হলো। ওই ট্রেনে ছিল অনেক পাকিস্তানি সেনা ও বিপুলসংখ্যক সশস্ত্র বিহারি। অ্যামবুশে প্রায় ৮০ জন পাকিস্তানি সেনা ও সশস্ত্র বিহারি হতাহত হয়। যারা বেঁচে যায়, তারা নিরাপদে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত সরে পড়েন সেখান থেকে।

এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৫ মে ঘটেছিল গোবিন্দপুরে। গোবিন্দপুর জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার অন্তর্গত। পার্বতীপুর-সান্তাহার রেলপথ পাঁচবিবি এলাকায় ভারতীয় সীমান্তের খুব কাছে। সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খানের নেতৃত্বে সেখানে চলন্ত ট্রেনে অ্যামবুশ করেন। ২৪ মে গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের অভ্যন্তরের সোবরা ক্যাম্প থেকে গোবিন্দপুরে যান। সোবরা থেকে গোবিন্দপুরের দূরত্ব কম ছিল না। এই অপারেশনের জন্য মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান নিজের উদ্যোগে ভারতের বালুরঘাটে একটি লেদ মেশিনের দোকানে হাই কার্বন স্টিলের এমএস পাইপ দিয়ে ছয়টি তিন ইঞ্চি মর্টার ব্যারেল তৈরি করেন। সেগুলো দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিখুঁতভাবে গোলা নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তাঁদের আরআর গান, রকেট লঞ্চার এবং সেগুলো চালানোর জন্য লোকবল দিয়ে সাহায্য করে।

মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান ১৯৭১ সালে জয়পুরহাট চিনিকলে কর্মরত ছিলেন। সেখানে যোগ দেওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইএমই কোরে চাকরি করেন। সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। এ সময় বৃহত্তর বগুড়া ও রাজশাহী জেলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সফল অ্যামবুশে তিনি নেতৃত্ব দেন। পরে মুক্তিবাহিনীর ৭ নম্বর সেক্টরের হামজাপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধেও প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। ১০ ডিসেম্বর দিনাজপুরের বিরলে এক যুদ্ধে তিনি আহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান