বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৮ নম্বর সেক্টর ছিল যুদ্ধবহুল গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টর। এর আওতাধীন এলাকা ছিল বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা এবং ফরিদপুর ও খুলনা জেলার অংশবিশেষ। ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট থেকে এই সেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের নেতৃত্বে। দুই-তিনটি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে খুলনা জেলার শিরোমণির যুদ্ধ অন্যতম। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করলেও খুলনায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা সেদিন আত্মসমর্পণ করেনি। ১৬ ডিসেম্বর রাতে সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের বর্ণনা আছে মুক্তিযুদ্ধকালে ওয়ার করসপনডেন্ট মুসা সাদিকের লেখায়। তিনি লিখেছেন: ‘...যশোর-খুলনার প্রবেশদ্বার শিরোমণিতে ট্যাংক নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মুখোমুখি হন মঞ্জুর (মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর) ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১০৭ ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার হায়াত্ খান।

‘মিসরের বুকে রোমেল-মন্টগোমারীর সেই বিশ্বখ্যাত আল-আমিন ট্যাংক ব্যাটলের কথা বহুবার পড়েছি। চাক্ষুষ দেখলাম শিরোমণির ট্যাংক ব্যাটল। সেই বিভীষিকাময় রাতে কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকসহ আমি ছিলাম শিরোমণিতে।

‘রাত যত বাড়ছিল, যুদ্ধের তীব্রতা তত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গোলার আঘাতে গাছপালাও ভেঙে পড়তে থাকে। ক্যাজুয়ালিটির পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এই দীর্ঘ রক্তাক্ত মরণযুদ্ধের সমাপ্তি টানার জন্য মঞ্জুর নিজের ওপর রিস্ক নিলেন।

‘চারদিকে কামানের গোলা, ট্যাংকের গর্জন। তার মধ্যে দিয়ে এসএলআর উঁচিয়ে একজনের হাত সবার আগে উঁচু হয়ে ছুটছে। সেটি কমান্ডো মেজর মঞ্জুরের।

‘হায়াত্ খানের কামানের গোলা, ট্যাংকের গর্জন আর মর্টার শেলিংয়ের ট্যাংক বূহ্যের মধ্যে বজ্রের কড়কড়ে আওয়াজে উল্কার বেগে ঢুকে গেলেন মঞ্জুর তাঁর সুইসাইডাল স্কোয়াড নিয়ে। পাকিস্তানি কর্নেল ব্রিগেডিয়ারদের বিস্ময় ঘোর কাটতে না-কাটতে চোখের নিমেষে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল হায়াত্ খানের ডিফেন্স।

‘চোখে না দেখলে এটা কীভাবে সম্ভব হলো কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। সে জন্যই বোধ হয় ভারতের দেরাদুন আর্মি একাডেমি ও ব্রিটিশ স্যান্ডহার্টস আর্মি একাডেমিসহ অন্যান্য দেশের আর্মি একাডেমিতে ট্যাংক ব্যাটল অব শিরোমণির ওপর একটা চ্যাপ্টারই পড়ানো হয়।’

মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। জুলাই মাসে সেখান থেকে কয়েকজনসহ পালিয়ে ভারতে আসেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান