বিজ্ঞাপন
default-image

মো. সানা উল্লাহ চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে।

১৯৭১ সালের মার্চে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বেশির ভাগ সদস্যকে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। কিছু অংশ থাকে সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। এরপর ভারতে যান। সেখানে তারা পুনর্গঠিত হন।

নভেম্বরের শেষে রাধানগরে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এখানকার বিভিন্ন জায়গায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান। তাদের একটি অবস্থান ছিল ছোটখেলে। ২৬ নভেম্বর মিত্রবাহিনীর ৫/৫ গোর্খা রেজিমেন্ট রাধানগরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সব অবস্থানে একযোগে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে গোর্খা রেজিমেন্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাদের কোম্পানি কমান্ডারসহ ৬৭ জন শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা কয়েকজন আহত হন। তবে কেউ এদিন শহীদ হননি।

মিত্রবাহিনীর ২৬ নভেম্বরের আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পর মুক্তিবাহিনীর ওপর রাধানগর দখলের দায়িত্ব পড়ে। ২৮ নভেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে ছোটখেল আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন শাফায়াত জামিল (বীর বিক্রম)। যুদ্ধে তিনি আহত হলে নেতৃত্ব দেন এস আই এম নূরুন্নবী খান (বীর বিক্রম)।

মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে ছোটখেল দখল করে নেন। পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থান ছেড়ে পিছু হটে যায়। সকাল আটটার দিকে তারা পুনর্গঠিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একের পর এক আক্রমণ মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিহত করেন। সেদিনকার যুদ্ধে মো. সানা উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও অনেকে আহত হন।

রাধানগর যুদ্ধ সম্পর্কে এস আই এম নূরুন্নবী খান বলেন, ‘২৮ নভেম্বর ১৯৭১। তখন সকাল সাতটা ৩০ মিনিটের মতো হবে। ব্যাপক আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপের পরপরই তিন দিক থেকে স্থল হামলা শুরু হলো। পাকিস্তানি সেনারা তিন দিক থেকে নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর, ইয়া আলী, ইয়া হায়দার ধ্বনি দিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ চালাল। উত্তরে রাধানগর এবং দক্ষিণে গোয়াইনঘাট থেকে আসা ওদের কাউন্টার অ্যাটাক ছিল খুবই মারাত্মক ধরনের। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে প্রতিহামলা প্রতিহত করলেন। দুপুর ১২টার দিকে পুনরায় পাকিস্তানি সেনাদের একটি ব্যাপক প্রতিহামলা আসে। এবারও তিন দিক থেকে এ হামলা আসে। এবারের প্রতিহামলায় তাদের জনবলের সংখ্যা পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।’

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান