বিজ্ঞাপন
default-image

তখন মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ছিল কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলায় (তখন থানা)। এই দলে ছিলেন মো. সদর উদ্দিন আহমেদসহ মাত্র কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা ক্ষুদ্র একটি দল। তাঁদের দলনেতা খবর পেলেন, ওই এলাকায় পাকিস্তানি সেনা এসেছে। কিন্তু সংখ্যায় তারা কতজন এবং তাদের শক্তির পরিমাণ সম্পর্কে কিছুই তার দলের জানা ছিল না। দলনেতার নির্দেশে সদর উদ্দিন আহমেদসহ মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত তৈরি হলেন। তাঁদের কাছে অস্ত্র বলতে হালকা অস্ত্র—স্টেনগান ও রাইফেল এবং কয়েকটি হ্যান্ড গ্রনেড। গুলির পরিমাণও সামান্য। এসবই সম্বল করে তাঁরা বেরিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের খোঁজে। তাঁরা সেনাদের মুখোমুখি হলেন হরিনারায়ণপুরের কাছে আড়পাড়ায়।

দলনেতার নির্দেশে সদর উদ্দিন আহমেদ ও তাঁর সহযোদ্ধারা আক্রমণ করলেন পাকিস্তানি সেনাদের। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত হলেও পাল্টা আক্রমণে দেরি করেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের মাথার ওপর দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি যেতে থাকল। তাঁদের পক্ষে মাথা তোলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ল।

পাকিস্তানি সেনা সংখ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে বেশি। অস্ত্রশস্ত্রও অত্যাধুনিক। গোলাগুলির একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের গুলি প্রায় শেষ হয়ে গেল। তাঁরা প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে পড়ে গেলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা সহযোদ্ধাদের দ্রুত পেছনে হটে নিরাপদ জায়গায় যেতে বললেন।

মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণের চেষ্টা করছেন বুঝতে পেরে পাকিস্তানি সেনারা তাদের আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দিল। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসরণও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ল। এ রকম পরিস্থিতিতে সামনাসামনি যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর ছিল না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বেশি গুলি না থাকায় সদর উদ্দিন আহমেদ সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি একাই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করবেন। এই সুযোগে তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে সরে যাবেন।

এরপর সদর উদ্দিন সাহসের সঙ্গে একাই সম্মুখযুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু এটা ছিল অসম যুদ্ধ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর।

মো. সদর উদ্দিন আহমেদ পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭১ সালে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ শেষে ভারতে যান। চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাবসেক্টরে। বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় তিনি সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান