বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে কোদালকাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট ছোট দল (প্লাটুন)। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মো. রেজাউল হক। ৪ আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরাট দল সেখানে আক্রমণ চালায়। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার অন্তর্গত কোদালকাটি।

১৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রৌমারী থানা সদর দখলের লক্ষ্যে কোদালকাটি থেকে রাজীবপুরের দিকে অগ্রসর হয়। তাদের একটি দল ব্যাপক গোলাগুলি করে মো. রেজাউল হকের অবস্থানে উঠে পড়ার চেষ্টা করে। তখন সীমিত শক্তি নিয়েই তিনি পাল্টা আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই দলের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করেন। সেনাবাহিনী পরে আরও কয়েকবার তাঁদের অবস্থানে আক্রমণ করে। প্রতিবারই তাঁরা সাহসের সঙ্গে তা প্রতিহত করেন।

অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে মুক্তিযোদ্ধারা কোদালকাটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। মূল আক্রমণে অংশগ্রহণকারী চারটি দলের একটি ছিল মো. রেজাউল হকের দল।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ২ অক্টোবর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সব অবস্থানে একযোগে আক্রমণ শুরু করে। প্রথমেই তাদের মুখোমুখি হন মো. রেজাউল হক। ব্যাপক মর্টার ফায়ারের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা তাঁর অবস্থানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। তবে বেশিক্ষণ পারেননি। প্রবল আক্রমণের মুখে তাঁদের কিছুটা পশ্চাদপসরণ করতে হয়।

পরে মো. রেজাউল হক তাঁর দলকে পুনরায় সংগঠিত করে আবার আক্রমণ চালান। তাঁর দল ও অন্যান্য দল একের পর এক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। সারা দিন বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ চলে। এতে হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর তারা আহত ও নিহত সেনাদের নিয়ে পিছু হটে নিজেদের ক্যাম্পে সমবেত হয়। পরদিন সকালে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেছে।

মো. রেজাউল হক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। ২৫ মার্চ তিনি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীতে মোতায়েন ছিলেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে রৌমারীতে যান। জুন-জুলাই মাসে তিনি কোদালকাটির খারুভাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অসংখ্য ছাত্র-যুবককে প্রশিক্ষণ দেন। কোদালকাটি ছাড়াও আরও কয়েকটি জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন তিনি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান