বিজ্ঞাপন
default-image

রাতের অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বড় এক ঘাঁটিতে। প্রচণ্ড গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। আকাশ রক্তিম হয়ে উঠল। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্বে মো. নুরুল আমিন। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাগুলির মধ্যেই সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি ঢুকে পড়লেন ঘাঁটির প্রায় ভেতরে। তাঁর সাহস দেখে পাকিস্তানি সেনারা তখন হতভম্ব। সেখানে মুখোমুখি যুদ্ধ চলতে থাকল। হঠাত্ গুলিবিদ্ধ হলেন মো. নুরুল আমিন। কিন্তু মনোবল হারালেন না। ১৯৭১ সালের ১৭ জুলাই দুর্গাপুরে এ ঘটনা ঘটে।

দুর্গাপুর কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত। মে মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এই ঘাঁটির কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের তত্পরতা কমে যায়। ১৬ জুলাই মধ্যরাতে (ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ১৭ জুলাই) মো. নুরুল আমিন একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সেখানে আক্রমণ চালান। সংখ্যায় তাঁরা অনেক হলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা ছিলেন কম। বেশির ভাগ কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে তাঁদের অনেকে আহত হলে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ছিল বেশ সুরক্ষিত। চারদিকে বাংকার। তারা সেই বাংকারে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে তাদের তেমন ক্ষতি না হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু মো. নুরুল আমিন দমে যাননি। সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটির প্রায় ভেতরে ঢুকে পড়েন। তখন শুরু হয় মুখোমুখি যুদ্ধ। মুখোমুখি যুদ্ধে তাঁর দলের অনেকে শহীদ ও আহত হন। তবু তাঁরা পিছু না হটে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি নিজেও আহত হন। তাঁর পেটে চারটি গুলি বিদ্ধ হয়। ওই অবস্থাতেও তিনি অনেকক্ষণ যুদ্ধ করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নিস্তেজ হয়ে পড়লে পরে সহযোদ্ধারা তাঁকে পাঠিয়ে দেন নিরাপদ স্থানে।

দুর্গাপুরে সকাল পর্যন্ত প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে বেয়নেট যুদ্ধ। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি দখল করতে না পারলেও তাদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।

মো. নুরুল আমিন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মার্চ মাসে তাঁর কোম্পানিকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে মোতায়েন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সুবেদার আলতাফ আলীর (বীর উত্তম, বীর প্রতীক) নেতৃত্বে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। রৌমারী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অনেক যুদ্ধে অংশ নেন। এর মধ্যে পলাশবাড়ী, কাঁটাখালী সেতু, রাজীবপুর, কুড়িগ্রাম ও উলিপুরের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান