বিজ্ঞাপন
default-image

রাতের প্রথম প্রহর থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। চলছে মধ্যরাতেও। কোনো বিরাম নেই। বৃষ্টির পানিতে চারদিক টইটম্বুর। এর মধ্যেই বেরিয়ে পড়েন মো. নাজিম উদ্দিনসহ একদল দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা। সংখ্যায় তাঁরা মোট ১৫ জন। তাঁদের দলনেতা তিনি নিজেই।

তাঁদের অস্ত্র বলতে মাত্র দু-তিনটি রাইফেল আর বাকি সব রামদা ও লাঠি। তাই সম্বল করে তাঁরা বৃষ্টিভেজা রাতে এগিয়ে যান। রাতের শেষ প্রহরে অতর্কিতে আক্রমণ চালান থানায়। তাঁদের আক্রমণে হতভম্ব হয়ে পড়েন থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা। পাল্টা আক্রমণ বা প্রতিরোধ দূরের কথা, অস্ত্র ফেলে ওসি ও পুলিশদের সবাই পালিয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে ১৫টি রাইফেল ও বেশ কিছু গুলি। এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালের মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের কোনো একদিন সুনামগঞ্জ জেলার (তখন মহকুমা) ধরমপাশা থানায়।

মো. নাজিম উদ্দিন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে প্রাণপণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে তাঁদের কয়েকজন এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে অবস্থানরত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। এরপর তাঁরা আশুগঞ্জে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন।

পাকিস্তানি বিমানবাহিনী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি (১৪-১৬) তাঁদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে বেশ কয়েকবার হামলা চালায়। এই হামলায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁরা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর তিনি নিজ এলাকায় যান।

এই সময় মো. নাজিম উদ্দিন ধরমপাশা থানায় গেরিলা আক্রমণ চালান। সফল এই আক্রমণ পরিচালনার পর তিনি পুনরায় ভারতের তেলঢালায় অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে যোগ দেন। সেখানে তিনি কিছুদিন একটি ক্যাম্পে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে বাছাই করে একটি ইয়ুথ কোম্পানি (১২০ সদস্য) গঠন করা হয়। এই কোম্পানি পরিচালনা ও নেতৃত্বের দায়িত্ব পান তিনি।

মো. নাজিম উদ্দিন নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে সীমান্ত অতিক্রম করে স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহযোদ্ধাদের নিয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় যান। সেখানে কমলপুরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা। কয়েক দিন পর তাঁরা সেখানে আক্রমণ চালান। তাঁদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আট-নয়জন পাকিস্তানি সেনা তাঁদের হাতে নিহত হয়। দুজনকে তাঁরা জীবিত অবস্থায় আটক করেন। এরপর তিনি তাঁর দল নিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান