বিজ্ঞাপন
default-image

তীব্র শীত। সন্ধ্যা হতে হতেই চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন। ঘোর অন্ধকার রাত। খালি চোখে দেড়-দুই হাত দূরেও কিছু চোখে পড়ে না। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিতে থাকলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলের নেতৃত্বে মো. জাহাঙ্গীর ওসমান ভূঁইয়া।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম লক্ষ্য, আখাউড়াসংলগ্ন মিরাসানী, নিরানসানী, সিঙ্গারবিল রেলস্টেশন, রাজাপুর ও আজমপুর দখল করা। এসব এলাকা আখাউড়া রেল জংশনসংলগ্ন। ঘোর অন্ধকার, কুয়াশা আর তীব্র শীত উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা মো. জাহাঙ্গীর ওসমানের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি অবস্থানের ওপর। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত।

মো. জাহাঙ্গীর ওসমান ভূঁইয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে পর্যুদস্ত করে ফেললেন পাকিস্তানি সেনাদের। তাঁদের সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা হতোদ্যম হয়ে পড়ল। একটু পর তারা পালাতে শুরু করল। এর মধ্যে হতাহত হয়েছে অনেক পাকিস্তানি সেনা। নিহত ও আহত সেনাদের ফেলেই অন্যরা পশ্চাদপসরণ করল।

পর্যুদস্ত পাকিস্তানি সেনারা সাময়িকভাবে পিছু হটলেও পরের দিন পুনর্গঠিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালাল। মো. জাহাঙ্গীর ওসমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনা আক্রমণ প্রতিরোধ করতে থাকলেন। খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করল। বৃষ্টির মতো ছিল সেই গোলাবর্ষণ। এতে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ বেকায়দায় পড়ে গেলেন। গোলার আঘাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতি হতে থাকল বেশ। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হলেন। মো. জাহাঙ্গীর ওসমান এতে দমে যাননি। পরের দিন সহযোদ্ধাদের পুনর্গঠিত করে আবার আক্রমণ চালান পাকিস্তানি সেনাদের ওপর। প্রচণ্ড যুদ্ধে জয়ী হন তাঁরাই।

এ ঘটনা ঘটে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে। আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত। সেখানে নিয়োজিত ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিপুল শক্তি। কয়েক দিনের যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী গোটা আখাউড়া এলাকা দখল করতে সক্ষম হয়।

মো. জাহাঙ্গীর ওসমান ভূঁইয়া ১৯৭১ সালে পড়াশোনার পাশাপাশি যুব রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা (তখন মহকুমা) ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যাওয়ার পর সীমান্ত এলাকায় ছোটখাটো কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। এরপর তিনি অন্তর্ভুক্ত হন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জন্য গঠিত প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে। প্রশিক্ষণ শেষে ২ নম্বর সেক্টরে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২ নম্বর সেক্টরের একটি কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান