বিজ্ঞাপন
default-image

১২ অক্টোবর ১৯৭১। সকাল আনুমানিক আটটা বা সোয়া আটটা। এ সময় মো. আবদুল্লাহ দেখতে পেলেন পাঁচ-ছয়টি গরুর গাড়ি ও চার-পাঁচটি রিকশা। সেগুলোতে মালামাল ভরা। নাগরপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগীদের জন্য টাঙ্গাইল থেকে রসদ ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। সেগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এলাসিন-নাগরপুর সড়ক দিয়ে গরুর গাড়িতে করে। পাহারায় আছে তাদের সহযোগী মিলিশিয়া ও রাজাকার। মিলিশিয়া-রাজাকার প্রায় ৩০-৩৫ জন। কয়েকজন আগে-পিছে হেঁটে আসছে। বাকিরা গরুর গাড়ি ও রিকশায় বসে। তারা বুঝতেও পারল না। নিশ্চিন্ত মনে আসছে। অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। আকস্মিক আক্রমণে হতভম্ব মিলিশিয়া ও রাজাকাররা। বিশেষত মো. আবদুল্লাহর দুঃসাহসিকতায় তারা প্রতিরোধের সুযোগই পেল না। নিহত হলো তিনজন রাজাকার। আহত ১১ জন। বাকিরা আত্মসমর্পণ করল। এ ঘটনা এলাসিনে। এর অবস্থান টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে দক্ষিণে। মানিকগঞ্জ জেলা সীমান্তে।

মো. আবদুল্লাহ ১৯৭১ সালে তত্কালীন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন। কর্মরত ছিলেন টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজার শাখায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। পরে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন। আবদুল কাদের সিদ্দিকীর দলে ছিলেন তিনি। মো. আবদুল্লাহ অনেক যুদ্ধে অংশ নেন। এর মধ্যে বাসাইলের নথখোলা, ঘাটাইল, নাগরপুর, মির্জাপুরের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গার রাজবাড়ির যুদ্ধে তিনি আহত হন। তাঁর বাঁ পায়ে মর্টার শেলের স্প্লিন্টারের আঘাত লাগে। মো. আবদুল্লাহর সাহসিকতার বর্ণনা আছে সুনীল কুমার গুহের বইয়ে। তিনি লিখেছেন:

‘কাদেরিয়া বাহিনীর কর্মকাণ্ডের গল্প কাদের [আবদুল কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম] এবং ওই বাহিনীর অন্যান্য বহু ছেলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে থাকাকালেই, আমি একদিন কাদেরকে জিজ্ঞেস করে জানতে চেয়েছিলাম যে, সে তার লড়াইয়ে সঙ্গীদের মধ্যে কাকে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং অসম সাহসী যোদ্ধা মনে করে?

‘প্রশ্নটির সোজা উত্তর না দিয়ে, সে আমাকে বলেছিল, দুর্ধর্ষ যোদ্ধা একজন-দুজন নয়, বহু ছিল। তাদের মধ্যে কে যে দুর্ধর্ষ তা বলা মোটেই সহজ হবে না।...আবার সবচেয়ে সাহসী ছেলে যে কে, তাও যদি জিজ্ঞেস করেন, তারও উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সহজ হবে না। অসম সাহসী ছেলেও দেখেছি অসংখ্য। তবুও একটি ছেলের কথা আমি আপনাকে বলতে পারি। যাকে আমি শুধু অসম সাহসীই মনে করি না, স্রেফ ভয় বিষয়ে বোধশক্তিহীন বলেই মনে করি। যাকে আপনি আবদুল্লাহ নামেই চেনেন। তারপর কাদের আবদুল্লাহর অতি অদ্ভুত যুদ্ধকর্মের আর সেই সঙ্গে তার ভয় বিষয়ে বোধহীনতার বিষয়েও কয়েকটি গল্প আমাকে শুনিয়েছিল।’

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান