বিজ্ঞাপন
default-image

তামাবিল সিলেটের জৈন্তাপুর থানার (বর্তমানে উপজেলা) অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। তামাবিলের ওপর দিয়ে সিলেট-তামাবিল-ডাউকি-শিলং সড়ক। ভারতের আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের সঙ্গে স্থলপথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতে যোগাযোগের মাধ্যম এ সড়কপথ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে সমবেত হন তামাবিলে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১ মে আকস্মিকভাবে তামাবিলে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পাকিস্তানি সেনারা তামাবিল দখল করে। মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে অবস্থান নেন।

মুক্তিযোদ্ধারা ৫ মে পুনরায় সংগঠিত হয়ে তামাবিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন ইপিআর সদস্য। এই আক্রমণে সার্বিক নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন মোতালিব, সুবেদার মেজর বি আর চৌধুরী, সুবেদার মজিবুর রহমান। একটি ক্ষুদ্র দলের (প্লাটুন) নেতৃত্ব দেন মো. আবদুল গনি। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা তামাবিল থেকে পালিয়ে যায়। অনেক দিন তামাবিল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলেই ছিল।

মো. আবদুল গনি চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট ইপিআর হেডকোয়ার্টারের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি এতে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন ৫ নম্বর সেক্টরের অধীনে। জৈন্তাপুর, হরিপুর, রাধানগর, জাফলং, গোয়াইনঘাটসহ কয়েকটি স্থানে তিনি যুদ্ধ করেন। ২৩ অক্টোবর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গোয়াইনঘাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৫ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারাও সহযোগী হিসেবে অংশ নেন। কয়েক দিন সেখানে যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধের কিছুদিন আগে মো. আবদুল গনি একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে রাতের অন্ধকারে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে গোয়াইনঘাটের ভাঙা সেতুতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। এতে পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। যুদ্ধের পর তাঁরা মো. আবদুল গনির নেতৃত্বে নিরাপদে ভারতের ক্যাম্পে ফিরে যান।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান