বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরে খবর এল, বাংলাদেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ৭ জুন জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় আসবে।

এরপর ভারত থেকে ঢাকায় আসে একদল গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলে ছিলেন মো. আবদুল আজিজ। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা কীভাবে এই অপারেশন করলেন, সেই বিবরণ শোনা যাক তাঁর নিজেরই বয়ানে (১৯৮৯):

‘আমরা ৪২ জনের দল মনতলি ক্যাম্প হয়ে ৬ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার গোপালদী আসি। সেখানে ১০টি দলে বিভক্ত হয়ে যার যার লক্ষ্যস্থলে রওনা হলাম।

‘আমাদের দলে মাতুয়াইলের অলি, ঢাকার বাবুল (শহীদ আজিজুল ইসলাম বীর বিক্রম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চন্দ্রপুর-লাতুমুড়া যুদ্ধে শহীদ) ও আমি। আমার সঙ্গে আরও একজন ছিলেন। তাঁর নাম আমার এখন মনে নেই।

‘আমাদের টার্গেট ছিল যাত্রাবাড়ী ইলেকট্রিক সাবস্টেশন। রাত ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী পৌঁছে দেখতে পেলাম, সেখানে ২০ জন পাকিস্তানি সেনা-পুলিশ পাহারায়। আরও আছে দুটি এলএমজি পোস্ট। আমাদের কাছে মাত্র একটা স্টেনগান। তাই আমাদের বাধ্য হয়েই যেতে হলো বিকল্প টার্গেট সায়েদাবাদ সেতুর নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া মেইন ইলেকট্রিক কেবল লাইন ধ্বংস করার জন্য।

‘আমাদের কাছে ছিল ৩০ পাউন্ড এক্সপ্লোসিভ। অভিজ্ঞতার অভাবে আমরা সব এক্সপ্লোসিভ কেবলে লাগিয়ে টাইম ফিউজে আগুন লাগিয়ে দৌড় দিলাম। অনেক দূর যাওয়ার পরও দেখি, বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে না। সেখানে আবার ফিরে যাব কি না ভাবছি, এমন সময় বিদ্যুত্ চমকের আলো ছড়িয়ে ঘটল প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। এর ধাক্কায় আমরা চারজনই মাটিতে পড়ে গেলাম।

‘পাঁচ পাউন্ড হলেই কাজ হতো, সেখানে দিয়েছি ৩০ পাউন্ড। অবস্থা সহজেই অনুমেয়। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুত্-সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এরপর আমরা পালিয়ে যাই। পরদিন ছদ্মবেশে সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ। সেতুর বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক ফাটল ধরেছে। তিনটি ফাটল বেশ বড়। বড় ফুটো হয়ে গেছে।’

মো. আবদুল আজিজ ১৯৭১ সালে ঢাকা কলেজের বিএ (পাস) ক্লাসের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছাত্ররাজনীতিও করতেন। তখন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। মার্চ মাসে চলমান অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের শেষে ভারতে যান। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুদ্ধে যোগ দেন। সায়েদাবাদের অপারেশন ছিল তাঁর প্রথম অপারেশন। পরে অপারেশন করেন গ্রিন রোডসহ আরও কয়েকটি জায়গায়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান