বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিবাহিনীর দুটি দল একযোগে আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছাতকের প্রতিরক্ষা অবস্থানে। শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের (ব্রাভো) নেতৃত্বে ছিলেন আকবর হোসেন। অপরটি আলফা দল।

ছাতক যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধকৌশল অনুযায়ী আলফা দলের মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রবর্তী দল হিসেবে আক্রমণ পরিচালনা করে। পেছনে ব্রাভো দল। ১৪ অক্টোবর দুপুরে দুই দল একযোগে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। তাঁদের রিকোয়েললেস রাইফেলের গোলায় পাকিস্তানিদের অনেক বাংকার ধ্বংস হয়। প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানিরা দিশেহারা হয়ে পড়ে।

ব্রাভো দলের মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যকর সহায়তায় আলফা দলের মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার আগেই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়েন। এ সময় আকবর হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুত অগ্রবর্তী দলের পূর্বের অবস্থানে গিয়ে অবস্থান নেন। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। দুই দলের মুক্তিযোদ্ধারাই সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

পরদিন (১৫ অক্টোবর) পাকিস্তানি তিনটি হেলিকপ্টার মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ করে। এতে আকবর হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা এবং অপর দলের মুক্তিযোদ্ধারা বিচলিত হননি বা মনোবলও হারাননি। সারা দিন যুদ্ধ চলে। ১৬ অক্টোবর সকাল থেকে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। সন্ধ্যার মধ্যেই গোটা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকা তাঁদের দখলে চলে আসে। পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

কিন্তু তার পরেই হঠাত্ যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্তের বাইরে যেতে থাকে। সিলেট থেকে ছাতকে আক্রান্ত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সাহায্য (রিইনফোর্সমেন্ট) চলে আসে। তারা দোয়ারাবাজার বেড়িবাঁধ দিয়ে ছাতকে অগ্রসর হয়। নতুন এই পাকিস্তানি সেনারা পেছনের উঁচু টিলাগুলোতে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়।

নতুন পাকিস্তানি সেনাদের আগমন ছিল অভাবিত। কারণ, পেছনে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি কাটঅফ পার্টি। তাদের ওপর দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রিইনফোর্সমেন্ট প্রতিহত করা। দল দুটি সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। সেটা আরেক কাহিনি।

তিন দিন স্থায়ী যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ছাতকে প্রায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের ছাতক থেকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী; দুই পক্ষেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

মো. আকবর হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে। পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। ১৯৭১-এ কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিলে ঢাকা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ভারতে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যুক্ত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান