বিজ্ঞাপন
default-image

২৬ মার্চ ঢাকার পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর থেকে পালিয়ে যাওয়া একদল বাঙালি সেনা সমবেত হয়েছিলেন নরসিংদীর পাঁচদোনায়। সেখানে তাঁরা যোগ দেন ময়মনসিংহ থেকে আসা প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে। ঢাকা-নরসিংদী সড়কের করইতনী, বাবুরহাট, পাঁচদোনাসহ কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধের পর তাঁরা প্রতিরক্ষাগত অবস্থান নেন ভৈরব-নরসিংদীর মাঝামাঝি রামনগর এলাকায়। ১৩ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেখানে তাঁদের আক্রমণ করে।

মফিজুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধাদের অবস্থান ছিল ভৈরব-নরসিংদীর মাঝে রামনগর রেলসেতুতে। সকাল ১০-১১টার মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা চলে এল মফিজুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল তাঁদের অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ চালাল। যুদ্ধ চলতে থাকল। মফিজুর রহমান তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করে চললেন। সারা রাত গোলাগুলি চলল। পরদিন ১৪ এপ্রিল সকালে শুরু হলো তাঁদের ওপর বিমান হামলা। চারদিকে বাড়িঘর-গাছপালায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে লাগল। একটু পর পাঁচ-ছয়টি হেলিকপ্টার থেকে নামল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল। এতে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিও প্রায় নিঃশেষিত। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো গোলাবারুদও তখন তাঁদের হাতে ছিল না। ক্ষুধায়ও তাঁরা বেশ কাতর। তিন-চার দিন আগে সামান্য খাবার খেয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত তাঁরা অনেক কষ্টে পশ্চাদপসরণ করে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চরে এসে সমবেত হন।

মফিজুর রহমান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে। তাঁর পদবি ছিল নায়েক। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্ট তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। তাঁরা সেই আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে তাঁদের প্রতিরোধ। বেশির ভাগ ইপিআর সদস্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। মফিজুর রহমানসহ কিছুসংখ্যক ইপিআর সদস্য পিলখানা থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন। পরে তাঁরা সমবেত হন বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে। সেখান থেকে তাঁরা নরসিংদীর পাঁচদোনায় যান। তিনি যুদ্ধ করেন ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান