বিজ্ঞাপন
default-image

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন মতিউর রহমান। তাঁর কর্মস্থল ছিল পাকিস্তানের করাচির মশরুর বিমানঘাঁটিতে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন। ১ মার্চ তাঁর ছুটি শেষ হলেও তিনি পাকিস্তানে যাননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যান। ৬ মে তিনি করাচি ফিরে যান।

করাচিতে যাওয়ার কিছুদিন পর মতিউর মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকেন কীভাবে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর একটি বিমান ছিনতাই করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া যায়। তাঁর এ পরিকল্পনার কথা তিনি কাউকে বলেননি। এমনকি নিজের স্ত্রীকেও বুঝতে দেননি। স্ত্রীও তাঁর হাবভাব থেকে ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি। এর পর থেকেই তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

দেশে আসার আগে মতিউর রহমান পাকিস্তানি শিক্ষানবিশ পাইলট রাশেদ মিনহাজকে বিমান উড্ডয়ন শিক্ষা দিতেন। গ্রাউন্ডেড হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন মিনহাজ যখন প্লেন নিয়ে উড়তে যাবেন, তখন তিনি ওই প্লেনে চড়ে সেটি ছিনতাই করবেন। বিমান ঘাঁটির কাছাকাছি সীমান্তের ওপারে আছে ভারতের এক বিমানঘাঁটি। বিমান ছিনতাই করতে পারলে তিনি সেখানে যাবেন।

মতিউর রহমান তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তারিখ নির্ধারণ করেন ২০ আগস্ট, শুক্রবার। সেদিন বেলা ১১টায় মিনহাজের একাই টি ৩৩ বিমান নিয়ে ওড়ার শিডিউল ছিল। আর কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে এ বিমানের যোগাযোগের সাংকেতিক নাম ছিল ‘ব্লুবার্ড’। সেদিন নির্ধারিত সময় মিনহাজ বিমান নিয়ে ৪ নম্বর ট্যাক্সি-ট্র্যাক দিয়ে রানওয়েতে ঢোকার জন্য এগিয়ে আসতে থাকেন। এ সময় মতিউরও নিজের গাড়ি চালিয়ে ওই ট্যাক্সি-ট্রাকে রওনা দেন। বিমানটি সেখানে একটি টিলার আড়ালে পৌঁছামাত্র তিনি বিমান থামানোর সংকেত দেন।

তাঁর সংকেতে মিনহাজ বিমান থামান। কারণ, কন্ট্রোল টাওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পরও ফ্লাইট সেফটি অফিসার কোনো বৈমানিককে বিমান থামানোর সংকেত দিলে তিনি বিমান থামাতে বাধ্য থাকেন। মতিউর সেফটি অফিসারের এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। ফলে মিনহাজ বিমান থামাতে বাধ্য হন এবং ক্যানোপি (জঙ্গি বিমানের বৈমানিকদের বসার স্থানের ওপরের স্বচ্ছ আবরণ) খুলে কারণ জানতে চান।

মতিউর এ সুযোগে দ্রুতগতিতে বিমানের ককপিটে উঠে পড়েন। এর একটু আগে একটি যুদ্ধবিমান অবতরণ করায় তখন রানওয়ে খালিই ছিল। হকচকিত মিনহাজ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি বিমানটি রানওয়েতে নিয়ে আকাশে ওড়ান। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানটি দিগন্তে মিলিয়ে যায়। তবে মতিউর বিমানটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিতে পারেননি। আকাশে ওড়ার পর দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি চলা অবস্থায় সেটি বিধ্বস্ত হয় এবং তাঁরা দুজনই নিহত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান