বিজ্ঞাপন
default-image

মতিউর রহমান ১৯৭১ সালে ঢাকায় বেবিট্যাক্সি চালাতেন। তখন তাঁর বয়স ২১-২২। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের আগরতলায় গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁকে নৌ-কমান্ডো বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বেশ কয়েকটি নৌ-অপারেশনে অংশ নেন তিনি। তাঁর প্রথম গেরিলা তত্পরতা অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে। একাত্তরের ১৫-১৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ পাওয়া নৌ-কমান্ডোরা পূর্ব পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দর ও প্রধান প্রধান নদীবন্দরে একযোগে যে অপারেশন করেন, সেটিই ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে খ্যাত। এটা ছিল খুব বড় অপারেশন। এ অপারেশনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি পাকিস্তানসহ বিশ্বকে হতভম্ব করে দেয়। পৃথিবীর প্রায় সব প্রচারমাধ্যম এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে।

অপারেশনের চূড়ান্ত তারিখ ছিল ১৫ আগস্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে। মতিউর রহমান অংশ নেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি ফেরিঘাট আক্রমণে। এ অপারেশনে তাঁরা অংশ নেন মোট নয়জন। তাঁদের দলনেতা ছিলেন শাহজাহান সিদ্দিকী (বীর বিক্রম)। সহ-দলনেতা তিনি। আগস্ট মাসের ১১-১২ তারিখে সীমান্ত অতিক্রম করে তাঁরা বাংলাদেশে আসেন। অপারেশন করার কথা ১৫ আগস্ট। সেদিন দাউদকান্দি এলাকায় ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়। তাঁদের গাইড অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে অপারেশন স্থগিত রাখতে হয়। পরদিন ১৬ আগস্ট মধ্যরাতে তাঁরা দাউদকান্দি ফেরিঘাটের ফেরি ও পন্টুনে লিমপেট মাইন লাগান। এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মতিউর রহমান। ফেরিঘাটে প্রহরায় ছিল পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকাররা। তারা টেরই পায়নি। মাইন লাগানোর পর মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত চলে যান নিরাপদ অবস্থানে। রাত পৌনে তিনটায় চারদিক প্রকম্পিত করে একের পর এক নয়টি লিমপেট মাইন বিস্ফোরিত হয়। মাইন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ও পাকিস্তানি সেনাদের অবিরাম গুলিবর্ষণে ২৫ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। দু-তিন দিন পর নৌ-কমান্ডোরা ভারতের আগরতলায় চলে যান।

পরবর্তী সময়ে মতিউর রহমান বরিশাল বন্দর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি অপারেশন করেন। এর মধ্যে বরিশালের অপারেশন ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তিনিই ছিলেন দলনেতা। ২৫-২৬ অক্টোবর সফলতার সঙ্গে এ অপারেশন সম্পন্ন করেন। তিনটি জাহাজ লিমপেট মাইনের সাহায্যে তাঁরা ডুবিয়ে দেন।

বেশির ভাগ অপারেশনে তিনি অসাধারণ দক্ষতা, বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। তিনি ছিলেন দুঃসাহসী একজন নৌ-কমান্ডো। যুদ্ধের পর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, জানানো যায়নি খেতাব পাওয়ার খবর। তাঁর খবর পাওয়ার পর জানা যায় তিনি আর বেঁচে নেই।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান