বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কয়েকটি বড় যুদ্ধ আমাদের বিজয়ের পটভূমি তৈরি করে। ধলই যুদ্ধ ছিল এমন এক যুদ্ধ, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ২৭ বা ২৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বিত শক্তি ধলই বিওপি দখলের জন্য যুদ্ধ শুরু করে। পাঁচ দিনের প্রচণ্ড যুদ্ধের পর তা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।

ধলই বিওপির পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণের জন্য নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে অক্টোবরের মাঝামাঝি কমলপুরে একত্র করা হয়। একটি দলে ছিলেন হাবিলদার মকবুল হোসেন। ২৭ অক্টোবর ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা আক্রমণ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় অর্থাৎ আক্রমণে যাওয়ার আগেই তাঁদের প্লাটুন ও আরেকটি প্লাটুন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আক্রান্ত হয়। পাকিস্তানি সেনাদের গোলাগুলির ব্যাপকতা এমনই ছিল যে মকবুল হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রা কিছুটা হলেও থমকে যায়। কিন্তু তাঁরা দমে গেলেন না। এর মধ্যেই তাঁরা ‘ফায়ার অ্যান্ড মুভ’ পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে লাগলেন।

উঁচু টিলার ওপর পাকিস্তানি সেনাদের একটি এলএমজি পোস্ট ছিল। সেখান থেকে অনবরত গুলিবর্ষণ হচ্ছিল। ফলে মুক্তিবাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। মকবুল হোসেন গুলি করতে করতে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের একদম কাছাকাছি পৌঁছে যান। এ সময় গুলি এসে লাগে তাঁর পায়ে। তাঁর অধিনায়কও আহত হন। তিনি তাঁর পাশেই ছিলেন। সহযোদ্ধা আবদুর রহমানের বুকে গুলি লাগে। হামিদুর রহমানের বুক ও কপাল গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। হতাহত হন তাঁদের প্রায় ১৫ জন। তাঁদের প্রথম দিনের আক্রমণ অভিযানের পরিসমাপ্তি এভাবে ঘটলেও যুদ্ধ মোটেও থেমে থাকেনি। কয়েক দিন সেখানে যুদ্ধ চলে। অবশেষে ৩ নভেম্বর ধলই মুক্ত হয়।

মকবুল হোসেন এর আগে আরও কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও জামালপুর জেলার কামালপুরের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ৩১ আগস্ট কামালপুরের যুদ্ধে তাঁদের দলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ যুদ্ধে তাঁদের অধিনায়ক ছিলেন মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী (বীর বিক্রম, পরে মেজর জেনারেল)। তিনি পরে বুঝতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা কোনো উঁচু জায়গা থেকে তাঁদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি ঘোষণা দেন, ওই ওপি অর্থাৎ অবজারভেশন পোস্ট যিনি খুঁজে বের করতে পারবেন, তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে। তখন মকুবল হোসেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একাই পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের মধ্যে ঢুকে সেই ওপি খুঁজে বের করেন। ওপিতে একজন পাকিস্তানি সেনা ছিল। তাকে তিনি ধরে আনেন।

মকবুল হোসেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁরা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে যান। পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান