বিজ্ঞাপন
default-image

আগেই ঠিক করা ছিল, মিত্রবাহিনীর গোলন্দাজ দল রাত ঠিক ১১টা ৪৫ মিনিটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ শুরু করবে। চারদিকের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ঠিক সময়েই গোলাবর্ষণ শুরু হলো। গোলাবর্ষণের প্রচণ্ডতা এমন যে, অনেক দূরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের নিচের মাটি কাঁপতে থাকল।

মইনুল হোসেন চৌধুরী তাঁর সহযোদ্ধাদের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তাঁর নির্দেশ পেয়ে তাঁরা দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হটিয়ে তিতাস নদীর পাড়, মুকুন্দপুর, সিংগাইর বিল আর আজমপুর মুক্ত করাই তাঁদের লক্ষ্য। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের কাছাকাছি (আনুমানিক ৪০০ মিটার দূরে) হওয়া মাত্র পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে বন্ধ হয়ে গেল তাঁদের দূরপাল্লার কামানের গোলাবর্ষণ। এরপর শুরু হলো দুই পক্ষের মেশিনগান ও রাইফেলের অবিরাম গোলাগুলি।

কুয়াশায় ঢাকা সেই রাতে যুদ্ধ পরিচালনা ছিল প্রকৃতপক্ষেই কঠিন। ভোর না হতেই শুরু হয় পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধরত তাদের প্রসিদ্ধ পাঠান রেজিমেন্ট-১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। দুর্ধর্ষ প্রকৃতির তারা। এর সঙ্গে তাদের ভারী কামানের গোলাবর্ষণ। পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর দুটি স্যাবর জেটও মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে গোলা ফেলতে থাকল। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণ।

মইনুল হোসেন চৌধুরী এতে বিচলিত হলেন না। সাহসের সঙ্গে তিনি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে থাকলেন। সারা দিন যুদ্ধ চলল। একের পর এক পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও পাকিস্তানিরা সফল হতে পারল না। মইনুল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে থাকলেন। পরদিন পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে গেল। এ ঘটনা ঘটে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায়।

মইনুল হোসেন চৌধুরী চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। তখন এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা। সে দিন বাঙালিদের ওপর গুলি চালাতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশ সরাসরি অমান্য করেন তিনি। ২৫ মার্চের পর এই জয়দেবপুর থেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাঙালি সেনাদের নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন তিনি। কামালপুরসহ আরও কয়েকটি জায়গাতেও তিনি যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান