বিজ্ঞাপন
default-image

সকাল থেকেই কাদেরিয়া বাহিনীর একদল মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি শুরু করলেন। তাঁরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলে আছেন ফয়েজুর রহমান ফুল। সন্ধ্যার আগেই শেষ হলো প্রস্তুতি। তারপর মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিলেন বিভিন্ন জায়গায়। দলনেতা সংকেত দেওয়ামাত্র তাঁরা একযোগে শুরু করলেন আক্রমণ। গোলাগুলিতে আকাশ রক্তিম হয়ে উঠল। বিভিন্ন জায়গায় আগুনের লেলিহান শিখা আর ধোঁয়া। চারদিকে মানুষের ছোটাছুটি আর হইচই। যুদ্ধ চলতে থাকল। ফয়েজুর রহমানও সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে চললেন। হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া একটি মর্টার শেল এসে পড়ল তাঁর সামনে। মুহূর্তে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। স্প্লিন্টার এসে লাগল তাঁর বুক, গলা ও ঊরুতে। রক্তক্ষরণে ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে পড়ছেন তিনি। একসময় জ্ঞান হারালেন। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ৩ বা ৪ ডিসেম্বরে। ঘটেছিল টাঙ্গাইলের অন্তর্গত ঘাটাইল উপজেলায়।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ঢাকায় আক্রমণের জন্য মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইলে বিমান থেকে ছত্রীসেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নভেম্বরের শেষ দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন টাঙ্গাইলে আসেন। তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান আবদুল কাদের সিদ্দিকীর সহায়তায় ছত্রীসেনা অবতরণের জন্য তিনটি স্থান নির্ধারণ করেন। এর একটি ছিল ঘাটাইল উপজেলার ব্রাহ্মণশাসন-মোগলপাড়ার পশ্চিমের তিন-চার বর্গমাইলের গোরাঙ্গীর চক। ছত্রীসেনারা কোন দিন সেখানে অবতরণ করবেন, প্রথম দিকে কাদের সিদ্দিকীর সেটা জানা ছিল না। এদিকে ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন দল জামালপুর ও শেরপুর থেকে পশ্চাদপসরণ করে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের এলেঙ্গা ও ঘাটাইলে সমবেত হয়। ফলে ঘাটাইলে ছত্রীসেনা নামানোর বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কাদের সিদ্দিকী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। রাতেই তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান। এ যুদ্ধে ফয়েজুর রহমানও অংশ নেন। সারা রাত সেখানে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মর্টার শেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে ফয়েজুর রহমান গুরুতর আহত হন। পরে সহযোদ্ধারা তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিয়ে যান গোপালপুর উপজেলার গুলিপচা গ্রামে।

ফয়েজুর রহমান পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭১ সালে চাকরির অপেক্ষায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। ৩ এপ্রিল টাঙ্গাইলের প্রতিরোধ ভেঙে পড়লে তিনি আশ্রয় নেন ভূঞাপুরে। পরে কাদেরিয়া বাহিনী গঠিত হলে ওই বাহিনীতে যোগ দেন। বিভিন্ন স্থানে বীরত্বের সঙ্গে গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধ করেন তিনি।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান