বিজ্ঞাপন
default-image

পালিয়ে যাওয়া একদল পাকিস্তানি সেনাকে দেখতে পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নিঃশব্দে ঘিরে ফেললেন। মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ পাটোয়ারী, অলিউল্লাহ পাটোয়ারী, এরশাদ উল্লা, আবদুল মতিন পাটোয়ারী প্রমুখ। ফারুক আহমদ পাটোয়ারীর কাছে এলএমজি। সবার আগে গর্জে উঠল তাঁর অস্ত্র। এ ঘটনা ঘটে শাশিয়ালীতে ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই।

শাশিয়ালী চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। ২৯ জুলাই দুপুর আনুমানিক ১২টা। এ সময় কয়েকজন গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দেন, ১৫-১৬টি নৌকা করে পাকিস্তানি সেনারা শাশিয়ালীর দিকে আসছে। তাদের সঙ্গে আছে পুলিশ ও রাজাকার।

কিছুক্ষণ পর গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের আবার জানান, পাকিস্তানি সেনাদের আরেকটি দল কড়ইতলীর ভেতর দিয়ে হেঁটে আসছে। মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেয়ে দ্রুত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলার প্রস্তুতি নিলেন। নৌকা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের নাগালের মধ্যে আসামাত্র একযোগে গর্জে ওঠে সবার অস্ত্র। চার-পাঁচজন পাকিস্তানি সেনা এবং সাত-আটজন রাজাকার ও পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে নিহত হয়। চার-পাঁচটি নৌকা পানিতে ডুবে যায়।

সেখানে শুকনো জায়গা তেমন ছিল না। ফলে পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ চালাতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছয়-সাতজনের একটি দল আশ্রয় নেয় এক আখখেতে। ফারুক আহমদ পাটোয়ারীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের দেখতে পেয়ে ঘেরাও করেন। ওই সময় সেনাদের তিন-চারজন একটি মাচানে বসে এবং বাকিরা খেতের আইলের আড়ালে পজিশনে ছিল। ফারুক আহমদ পাটোয়ারী তাঁর এলএমজি দিয়ে প্রথম গুলি শুরু করেন। যে কয়জন মাচানে বসে ছিল, তারা এলএমজির গুলিতে সঙ্গে সঙ্গে নিহত হয়। খেতের আইলে যারা ছিল তারা বেঁচে যায়। তারা পাল্টা গুলি না ছুড়ে চুপচাপ থাকে।

তারপর নিঃশব্দে কাটে কয়েক মিনিট। ফারুক আহমদ পাটোয়ারী মনে করেছিলেন সব পাকিস্তানি সেনা নিহত। তিনি উঠে দাঁড়ানোমাত্র বেঁচে যাওয়া পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। তখন তিনি আহত হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে পাঠালেন চিকিত্সকের কাছে। চিকিত্সকের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিভে যায় ফারুক আহমদ পাটোয়ারীর জীবনপ্রদীপ। পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

ফারুক আহমদ পাটোয়ারী চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের নির্ভয়পুর সাবসেক্টরে।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান