বিজ্ঞাপন
default-image

পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত অমরখানা-জগদলহাট। ২২ নভেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অমরখানা অবস্থানে আক্রমণ চালায়।

এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নূরুল হকের দলসহ মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি দল (কোম্পানি) অংশ নেয়। আক্রমণের আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারি দল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে গোলাবর্ষণ করে। এর সহায়তায় নূরুল হকসহ মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁদের তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পিছু হটে যায়। অমরখানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।

অমরখানা দখলের মধ্য দিয়ে ওই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। অধিনায়কের নির্দেশে নূরুল হকসহ উদ্দীপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা পরদিনই (২৩ নভেম্বর) জগদলহাটে আক্রমণ করেন। এবারও ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁদের সহযোগিতা করে। কিন্তু এদিন মুক্তিযোদ্ধারা সফলতা অর্জন করতে পারেননি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তীব্রভাবে তাঁদের প্রতিরোধ করে। তখন সেখানে দুই পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।

এ যুদ্ধে নূরুল হকসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জগদলহাটের ঘাঁটি ছিল বেশ শক্ত। নূরুল হকসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে মূল প্রতিরক্ষায় ঢুকে পড়েন। তাঁর দুই পাশের দু-তিনজন সহযোদ্ধা মাইন ও গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়েন। পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ ভাঙার জন্য তিনি গুলি করতে করতে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

দেশমাতৃকার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও প্রতিশোধের নেশায় সাহসী নূরুল হক এগিয়ে যান, কিন্তু সফল হতে পারেননি। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি লাগে তাঁর বুকে। নিমেষে নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ।

সেদিন যুদ্ধে নূরুল হকসহ কয়েকজন সহযোদ্ধার শহীদ হওয়ার ঘটনা মুক্তিযোদ্ধাদের মনে প্রতিশোধের স্পৃহা আরও বেশি করে জাগিয়ে তোলে। তাঁরা পরদিন (২৪ নভেম্বর) নতুন উদ্যমে জগদলহাটে আক্রমণ চালান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১২ রাজপুত রেজিমেন্টের একটি দল (কোম্পানি) তাঁদের সহযোগিতা করে। সম্মিলিত আক্রমণে দিশেহারা পাকিস্তানি সেনারা পঞ্চগড়ে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। তিন দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নূরুল হকসহ পাঁচ-ছয়জন শহীদ এবং প্রায় ৩৭ জন আহত হন।

শহীদ নূরুল হক চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর সেক্টরের ঠাকুরগাঁও উইংয়ের অধীনে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর ৬ নম্বর সেক্টরের ভোজনপুর সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন তিনি। বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট সাহস, দক্ষতা ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান