বিজ্ঞাপন
default-image

আকস্মিক গোলাগুলির মুখে সতর্ক হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। সংখ্যায় তাঁরা ছিলেন মাত্র চারজন—নূর মোহাম্মদ শেখ, মোস্তফা কামাল (বীর প্রতীক), নান্নু মিয়া (বীর প্রতীক) ও আরেকজন। শত শত গুলি ধেয়ে আসতে থাকে তাঁদের দিকে। তাঁরা বুঝতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের আক্রমণ করেছে। সাহসের সঙ্গে তাঁরা চারজন আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। এ ঘটনা গোয়ালহাটিতে। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। গোয়ালহাটি যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার অন্তর্গত। সীমান্তবর্তী এলাকা।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গতিবিধি লক্ষ করার জন্য সুতিপুর প্রতিরক্ষার অগ্রবর্তী এলাকা গোয়ালহাটিতে নিয়োজিত ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্ট্যান্ডিং প্যাট্রোল পার্টি। এই প্যাট্রোল পার্টির অধিনায়ক ছিলেন নূর মোহাম্মদ শেখ।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের এই স্ট্যান্ডিং প্যাট্রোলের অবস্থান কীভাবে যেন টের পেয়ে যায়। খবর পাওয়া মাত্র তারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তিন দিক থেকে ছোট ওই প্যাট্রোল পার্টির ওপর আক্রমণ চালায়। জরুরি অবস্থা বুঝতে পেরে নূর মোহাম্মদ শেখ সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন।

কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা ছিল অনেক ও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারেন, তাঁরা বেশিক্ষণ পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই করতে পারবেন না। মূল প্রতিরক্ষা অবস্থানের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা পেছনে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময় নান্নু মিয়া গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আহত নান্নু মিয়াকে কাঁধে নিয়ে নূর মোহাম্মদ শেখ গুলি করতে করতে পেছনে সরে আসছিলেন। তখন হঠাত্ দুই ইঞ্চি মর্টারের গোলার আঘাতে তাঁর ডান পায়ের হাঁটু ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

বিপর্যয়কর এই অবস্থায় নূর মোহাম্মদ শেখ দুঃসাহসী ভূমিকা পালন করেন। তিনি সহযোদ্ধা মোস্তফা কামালকে নির্দেশ দেন, আহত নান্নু মিয়াকে কাঁধে করে নিয়ে পেছনে সরে যেতে। আর তাঁদের পশ্চাদপসরণের সহযোগিতার জন্য কাভারিং ফায়ার দেওয়ার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেন। মোস্তফা কামাল তাঁকে ফেলে কোনোভাবে পিছু হটতে রাজি ছিলেন না। নূর মোহাম্মদ শেখ জোর করে তাঁদের পেছনে পাঠান। এরপর মর্টার শেলের আঘাতে যন্ত্রণায় কাতর নূর মোহাম্মদ একাই লড়াই করতে করতে শহীদ হন।

নূর মোহাম্মদ শেখ চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১-এ কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর উইংয়ের অধীনে। তাঁর পদবি ছিল ল্যান্স নায়েক।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান