বিজ্ঞাপন
default-image

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তর্গত নকশী বিওপি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষাব্যূহ। ৩ আগস্ট শেষ রাতে (তখন ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ৪ আগস্ট) মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করেন। তখন সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর দলে ছিলেন নাসির উদ্দিন। তিনি শহীদ হন এই যুদ্ধে।

ক্যাপ্টেন আমীন আহম্মদ চৌধুরীর (বীর বিক্রম, পরে মেজর জেনারেল ও রাষ্ট্রদূত) ভাষ্যে আছে এই যুদ্ধের বর্ণনা। তিনি বলেন:

‘সুষ্ঠুভাবেই মুক্তিযোদ্ধারা অ্যাসেম্বলি এরিয়া থেকে এফইউপিতে পৌঁছান। পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি রাত তিনটা ৪৫ মিনিটে আর্টিলারি ফায়ার শুরু করার সংকেত দিই। সঙ্গে সঙ্গে আর্টিলারি গর্জে ওঠে। একই সময় পাকিস্তানি আর্টিলারির কামান ও মর্টার থেকেও গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের একবার মাটিতে শুয়ে পড়া, আবার উঠে দাঁড়িয়ে অগ্রসর হওয়া ছিল দুঃসাহসিক কাজ।

মুক্তিযোদ্ধারা (নাসির উদ্দিনসহ) এক্সটেনডেড ফরমেশন করে সামনে এগিয়ে যান।

আমার বাঁয়ে হাবিলদার নাসির (নাসির উদ্দিন) অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে ক্ষিপ্রগতিতে এগোতে থাকেন। আমি নিজে নায়েক সিরাজকে (সিরাজুল হক, বীর প্রতীক, এই যুদ্ধে শহীদ) নিয়ে ডানে পাকিস্তানি বাংকার লক্ষ্য করে এগোতে থাকি। আমাদের মনোবল দেখে শত্রুরা তখন পলায়নরত। আমি সঙ্গে সঙ্গে চার্জ বলে হুংকার দিই।

‘মুক্তিযোদ্ধারা (নাসির উদ্দিনসহ) সঙিন (অস্ত্র) উঁচু করে রীতিমতো দৌড়াতে থাকেন। নায়েব সুবেদার মুসলিম এ সময় উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য ঘন ঘন “জয় বাংলা-নারায়ে তাকবির” ধ্বনি করলে মুক্তিযোদ্ধারা “জয় বাংলা-ইয়া আলি” স্লোগান দিয়ে যুদ্ধের ময়দানকে প্রকম্পিত করে তোলেন।

‘নাসিরসহ মুক্তিযোদ্ধারা যখন শত্রুশিবিরের মাত্র ১০০ গজের মধ্যে, ঠিক তখনই শত্রুদের নিক্ষিপ্ত একটি আর্টিলারির শেলভো ফায়ার (এয়ার ব্রাস্ট) এসে পড়ে তাঁদের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন মাটিতে ঢলে পড়েন। এর মধ্যে হাবিলদার নাসিরও ছিলেন। আমার ডান পায়েও স্প্লিন্টার লাগে। এ সময় আমাদের কিছু মুক্তিযোদ্ধা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। অন্যরা এগিয়ে যান। দেখতে পেলাম, আমাদের গুটিকতক মুক্তিযোদ্ধা পলায়নরত শত্রুদের মারছেন। কেউ কেউ মাইনফিল্ডে ফেঁসে গিয়ে উড়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধক্ষেত্রটা যেন তখন মহাশ্মশান।’

নাসির উদ্দিন চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে। কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। ১৯৭১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে বাড়ি আসেন। প্রতিরোধযুদ্ধকালে আশুগঞ্জের যুদ্ধে অংশ নেন। পরে ভারতে যাওয়ার পর তাঁকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান