বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে বৃহত্তর সিলেট জেলা মুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে অভিযান শুরু করেন। এক দল (অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, এক ব্যাটালিয়ন শক্তি) অগ্রসর হয় ভারতের কৈলাসশহর থেকে মৌলভীবাজার জেলার শমশেরনগর অক্ষ ধরে। এই দলে ছিলেন দেলোয়ার হোসেন।

এ অক্ষপথে বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ও প্রতিরক্ষা। ১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা আলীনগর চা-বাগানে (মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার অন্তর্গত) আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ করে। দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে পাকিস্তানিদের চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর তারা পিছু হটে ভানুগাছে আশ্রয় নেয়।

দেলোয়ার হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের অনুসরণ করে উপস্থিত হন ভানুগাছে। এখানে আগে থেকেই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। স্থানটি ছিল ভৌগোলিক ও সামরিক দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

৬ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা ভানুগাছে আক্রমণ করেন। সারা দিন ধরে এখানে যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনারা মরিয়া হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে। দেলোয়ার হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা এতে বিচলিত হননি। সাহসের সঙ্গে তাঁরা যুদ্ধ করেন। তাঁদের বীরত্বে বিপর্যস্ত পাকিস্তানিরা পরদিন পালিয়ে যায়।

ভানুগাছে দেলোয়ার হোসেন বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তাঁর বীরত্বে পাকিস্তানিদের বেশ ক্ষতি হয়। যুদ্ধ চলাবস্থায় সন্ধ্যায় (৬ ডিসেম্বর) তিনি আহত হন। পাকিস্তানিদের ছোড়া একটি গুলি তাঁর গালে লাগে। এতে তাঁর চোয়াল ক্ষতিগ্রস্ত ও কয়েকটি দাঁত পড়ে যায়। তার পরও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাননি। অবশ্য একটু পর তাঁর অবস্থার অবনতি হয়ে পড়ে। তখন তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে দ্রুত ফিল্ড চিকিত্সাকেন্দ্রে পাঠান।

দেলোয়ার হোসেন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম সেক্টরের অধীন ১১ উইংয়ের (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন) হেডকোয়ার্টার্স কোম্পানিতে। এর অবস্থান ছিল হালিশহরে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাতে। হালিশহর, পাহাড়তলী, কালুরঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন।

কালুরঘাট যুদ্ধে তিনি আহত হন। তাঁর বাঁ পায়ে গুলি লাগে। এ সময়ও তিনি আহত অবস্থায় অনেকক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যান। কালুরঘাটের পতন হলে গ্রাম-চিকিত্সকের কাছে চিকিত্সা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর ভারতে যান। এরপর ১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নকশী বিওপি, উলিপুর, দক্ষিণগুল চা-বাগান, সোনারুপা চা-বাগানসহ আরও কয়েকটি স্থানে তিনি সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান