বিজ্ঞাপন
default-image

ফেনী জেলার অন্তর্গত বিলুনিয়া। ১৬ মাইল লম্বা এবং ছয় মাইল প্রস্থ সরু এক ভূখণ্ড। এলাকাটি অনেকটা উপদ্বীপের মতো। প্রায় গোটা এলাকাই ভারতের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এর তিন দিকেই ভারত সীমান্ত।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বিলুনিয়ায় পাকিস্তানি সেনাদের অবরোধ করেন। তখন ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন জাফর ইমাম।

এ ঘটনা শোনা যাক জাফর ইমামের জবানিতে, ‘ভোর হওয়ার আগেই আমরা সবাই আমাদের নির্ধারিত স্থানে হাজির হলাম। শত্রুদের পরশুরাম ও চিথলিয়া ঘাঁটি পুরোপুরি আমাদের অবরোধের মধ্যে আটকা পড়ল। চিথলিয়া ঘাঁটি থেকে যাতে কোনো প্রকার আক্রমণ না আসতে পারে, তার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুললাম।

‘৯ নভেম্বর। সকাল থেকে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। শত্রুরা সারা দিন আমাদের বিভিন্ন পজিশনের ওপর তুমুলভাবে আক্রমণ চালাল। আমরাও আক্রমণের দাঁতভাঙা জবাব দিলাম। বৃষ্টির মতো আর্টিলারি আর মর্টার শেলিংয়ের শব্দে আশপাশের নীরব এলাকা কেঁপে উঠতে থাকল। ক্রমে রাত হয়ে এল।

‘তারপর ভোর হলো। সারা দিন যুদ্ধ চলল। বেলা চারটার দিকে শত্রুরা আমাদের ওপর বিমান হামলা শুরু করল। কিন্তু আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারল না। এদিন গেল। পরের দিনও আগের দিনের মতো ফায়ারিং, শেলিং, আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণ চলল। এদিনও তারা বিমান থেকে বোম্বিং শুরু করল।

‘পাকিস্তানি পাইলটরা হয়তো জেনেছিল, আমাদের কাছে বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র নেই। তাই তারা নিশ্চিন্ত হয়ে নিচ দিয়ে বিমান চালাছিল। শেষরক্ষা হিসেবে আমরা আমাদের এলএমজি এ কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আওতায় আসামাত্র আমাদের সব এলএমজি একযোগে গর্জে উঠল। দুটি বিমান উড়ে গেল। একটি যেতে পারল না। শূন্যে ঘুরপাক খেয়ে ছিটকে পড়ল মাটিতে। কোনো যুদ্ধের ইতিহাসে এলএমজি দিয়ে এর আগে বিমান ভূপাতিত করা হয়নি। আমরা তা-ই করতে পেয়েছি।’

জাফর ইমাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। তখন তাঁর পদবি ছিল ক্যাপ্টেন। ১৯৭১ সালে ঢাকায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ঢাকা থেকে পালিয়ে তাতে যোগ দেন। পরে ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাবসেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তাঁকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর কে ফোর্সের অধীন পুনর্গঠিত ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া হয়।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান