বিজ্ঞাপন
default-image

সালদা নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সালদা নদী, মন্দভাগ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই এলাকা মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য তখন সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা সালদা নদী হয়ে মেঘনা নদী এলাকা, ফরিদপুর, চাঁদপুর ও কুমিল্লার ভাটি এলাকায় অপারেশনে যেতেন। সে কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সালদা নদীর ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখত। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। মন্দভাগ রেলস্টেশন মুক্তিবাহিনীর দখলে থাকলেও সালদা নদী রেললাইন ক্রসপয়েন্ট বা সিগন্যাল পয়েন্টের উত্তর-পশ্চিমাংশ ছিল পাকিস্তানি সেনাদের দখলে। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ক্যাম্প। এ ক্যাম্পের কারণে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিবাহিনীর সালদা নদী সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সেখানে ২৬ আগস্ট একযোগে আক্রমণ করে।

দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ করে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। স্টুডেন্ট গ্রুপ আক্রমণ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ করল। কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ল। জাকির হোসেন তাঁর দল নিয়ে বুকসমান পানির ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেলেন একদম পাকিস্তানি ক্যাম্পের কাছাকাছি। ২০০ গজ সামনে পশ্চিমে রেললাইনের ওপরে সর্বশেষ এলএমজি পোস্ট দখল বা ধ্বংস করতে পারলেই পাকিস্তানি প্রতিরক্ষাব্যূহের পতন ঘটবে। হঠাৎ সহযোদ্ধা মোস্তাক তাঁর অগোচরে একাই এগিয়ে গেলেন সেদিকে। রেললাইনের কাছে পৌঁছে মাথা তুলতেই গুলি এসে লাগল তাঁর চোয়াল ও ডান হাতে। সহযোদ্ধার চিৎকার শুনে জাকির গুলিবর্ষণের মধ্যেও এগিয়ে গেলেন তাঁকে বাঁচাতে। কাছে গিয়ে মাথা তোলামাত্র তাঁকেও বরণ করতে হলো একই পরিণতি। গুলি এসে লাগল তাঁর কপাল ও বুকের পাঁজরে। তিনি শহীদ হলেন। তখন বেলা প্রায় তিনটা। দলনেতা শহীদ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সেদিনের আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পরে সহযোদ্ধারা জাকির হোসেনের লাশ উদ্ধার করে সমাহিত করেন মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে রঘুরামপুর গ্রামের এক টিলার ওপরে, যা কুল্লাপাথর সমাধি হিসেবে পরিচিত।

জাকির হোসেন ১৯৭১ সালে বিএসসি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে। আগরতলায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। পরে সালদা নদী সাব-সেক্টরের অধীন বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন ১২ নম্বর গ্রুপের দলনেতা।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, প্রথম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১২

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান