বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে ৪ নম্বর সেক্টর ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক এলাকা। এই সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন চিত্তরঞ্জন দত্ত। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিরাট অংশ নিয়ে ছিল এই সেক্টর। অধীন এলাকাগুলো হলো সিলেট জেলার কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলা, সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা উপজেলা এবং মৌলভীবাজার জেলা।

৪ নম্বর সেক্টর এলাকায় অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে চিত্তরঞ্জন দত্ত নিজেই নেতৃত্ব দেন। সেক্টর গঠিত হওয়ার পর চিত্তরঞ্জন দত্তের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম দিকের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠে। ছাত্র-জনতা-কৃষক-শ্রমিক এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সুপরিকল্পিতভাবে অনেকগুলো অপারেশন করেন। চিত্তরঞ্জন দত্তের একটি ভাষ্য আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ, দলিলপত্র, দশম খণ্ডে। বয়ানে তাঁর সেক্টরের অনেক যুদ্ধের বর্ণনা আছে। একটি যুদ্ধের কথা শোনা যাক সেই বয়ান থেকে:

‘...খাওয়া-দাওয়া করে গ্রাম থেকে দুজন গাইড নিয়ে চললাম হিমুর উদ্দেশে। সারা রাত নদী-খাল-বিল পার হয়ে পৌঁছলাম আটগ্রাম বলে একটি গ্রামে। সেখান থেকে হিমুর দূরত্ব দুই মাইল। আটগ্রামে পৌঁছলাম ভোর চারটায়। গ্রামের পাশে নদী পার হতে হবে। ওপারে সবাই পৌঁছলাম। সকাল হতে চলেছে। দেখলাম হিমু পর্যন্ত পুরো মাঠ খোলা। চিন্তা করলাম দিনের বেলা এই খোলা মাঠের ভেতর দিয়ে যাওয়া সমীচীন হবে না।

‘যা-ই হোক আমরা সবাই আবার নদী পার হয়ে আটগ্রামে ফিরে এলাম। বেলা সাড়ে আটটা হবে। পাকিস্তানিদের দিক থেকে শুরু হলো গোলাবর্ষণ। একই সঙ্গে মেশিনগান ও এসএমজির গুলিবর্ষণ। কিছু করার নেই, একেবারে শত্রুর মুখে পড়ে গেছি। আটগ্রাম ছোট গ্রাম। বৃষ্টির মতো গোলাগুলি হচ্ছিল। চিন্তা করলাম যদি আটগ্রামে থাকি সবাই মারা যাব। তাই সবাইকে বললাম, যে যেভাবে পারে পেছনে যেতে (পৃষ্ঠা: ৩৪৭-৪৮)।’

পরে সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। চিত্তরঞ্জন দত্ত অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেন। তাঁর প্রেরণায় মুক্তিযোদ্ধারা যথেষ্ট সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন।

চিত্তরঞ্জন দত্ত চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্সে। ১৯৭১ সালে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল মেজর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন। হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে তিনি ৪ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান